রাশিয়া আজ উদযাপন করল ইতিহাসের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ—দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি জার্মানির বিরুদ্ধে বিজয়ের ৮০ বছর। এ উপলক্ষে মস্কোর রেড স্কয়ারে আয়োজিত হয় এক বর্ণাঢ্য ও নজরকাড়া ‘ভিক্টরি ডে প্যারেড’, যেখানে রাশিয়ার সামরিক ঐতিহ্য ও আধুনিক প্রযুক্তির এক দুর্দান্ত সমন্বয় তুলে ধরা হয়।
শুক্রবার সকালে শুরু হওয়া এই মহা আয়োজনে ১১ হাজারেরও বেশি সেনা অংশ নেয়, যাঁদের মধ্যে ছিলেন রাশিয়া ছাড়াও মিত্র ও সহযোগী দেশগুলোর সামরিক প্রতিনিধি।
বিশ্বমঞ্চে রাশিয়ার কূটনৈতিক অবস্থানকে তুলে ধরার এই প্যারেডে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা, মিশরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ আল-সিসি, এবং ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোসহ প্রায় ৩০টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান উপস্থিত ছিলেন।
ভাষণে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের অবদান স্মরণ করে বলেন,
“আমরা ইতিহাস বিকৃতির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাব। প্রকৃত বিজয়ীদের সম্মানহানি এবং নাৎসিবাদ, রুশফোবিয়া ও ইহুদি বিদ্বেষকে কখনোই বৈধতা দিতে দেব না।”
পুতিন একইসঙ্গে চীন ও অন্যান্য মিত্রদেশের অবদানের প্রশংসা করেন এবং বলেন,
রাশিয়া অতীতের শিক্ষা ভুলে যাবে না। মানবতাবিরোধী কোনো মতাদর্শকে আমরা কখনোই প্রশ্রয় দেব না।
এই প্যারেডে প্রথমবারের মতো ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যবহৃত ড্রোন প্রযুক্তি প্রদর্শন করে রাশিয়া।
এখানে ছিল:
🔸Orlan-10 ও Orlanth
🔸Lantsent ড্রোন
🔸ইরানি প্রযুক্তিনির্ভর Shahed-136 এর রাশিয়ান সংস্করণ Geran-2
উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন অনুষ্ঠানে উপস্থিত না থাকলেও, তার পাঠানো সামরিক বাহিনীর সদস্যরা কুচকাওয়াজে অংশ নেন। পরে তাদের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। অন্যদিকে, কিম নিজের কন্যাকে নিয়ে পিয়ংইয়ংয়ে অবস্থিত রুশ দূতাবাসে যান এবং বিজয় দিবস উদযাপনে অংশ নেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছিল ১৯৩৯ সালে জার্মানির পোল্যান্ড আক্রমণের মধ্য দিয়ে।
যুদ্ধের শেষ দিকে পরাজয়ের মুখে ১৯৪৫ সালের ৩০ এপ্রিল হিটলার আত্মহত্যা করেন।
তাঁর মৃত্যুর ঠিক আটদিন পর, ৮ মে ১৯৪৫—জার্মানির নাৎসি বাহিনী নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করে।
এই দিনটি বিশ্বব্যাপী ‘ভিক্টরি ইন ইউরোপ ডে’ হিসেবে পালিত হয়।
বিশ্বশান্তি ও ঐতিহাসিক স্মৃতিচারণের এই দিনেও পশ্চিমা জোটের অনেক দেশের নেতারা প্যারেড থেকে দূরে ছিলেন। তবে রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্রদের সরব উপস্থিতি দেশটির আন্তর্জাতিক অবস্থান ও বর্তমান ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
Leave a Reply