রাজধানী ঢাকার রাস্তায় উন্নয়নমূলক কাজ এখন নগরবাসীর জন্য চরম দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রধান সড়ক থেকে অলিগলি—সব জায়গায় চলছে দেদার খোঁড়াখুঁড়ি। ড্রেনেজ সংস্কার, জলাবদ্ধতা নিরসন বা নেটওয়ার্ক উন্নয়নের নামে রাস্তা খোঁড়া হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কাজ শেষ না করে পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে রাখা হচ্ছে। ফলে প্রতিদিন ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ মানুষ।
২০১৯ সালে প্রণীত ঢাকা মহানগরী সড়ক খোঁড়া নীতিমালায় স্পষ্টভাবে বলা আছে—একসঙ্গে পুরো রাস্তা খোঁড়া যাবে না, ধাপে ধাপে ১৫ দিনের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে, ধুলাবালি রোধে ব্যবস্থা নিতে হবে এবং সতর্কীকরণ ফিতা দিয়ে ঘের দিতে হবে। কিন্তু বাস্তবে এ নীতিমালা কার্যত ‘কাগুজে বাঘ’ হয়েই আছে। মিরপুর-১১, তেজগাঁও, বাসাবোসহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়, মাসের পর মাস রাস্তা খুঁড়ে ফেলে রাখা হচ্ছে।
মিরপুর-১১-এর ‘প্যারিস রোড’ এখন যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকার মতো। রাস্তা খুঁড়ে ফেলে রাখা, ড্রেনের আবর্জনার দুর্গন্ধ এবং কাদা–ধুলার কারণে বাসিন্দারা যেন বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন। স্থানীয়রা বলছেন, পথ চলা থেকে শুরু করে দৈনন্দিন কাজকর্ম—সবই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এমনকি বাচ্চারা খোলা ড্রেনে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম স্বীকার করেছেন, ঠিকাদাররা সময়মতো কাজ শেষ না করলে জরিমানার বিধান থাকলেও পরিকল্পনার ঘাটতির কারণে সমস্যাগুলো থেকে যাচ্ছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক ঠিক করতে আরও এক থেকে দেড় বছর সময় লাগবে। তবে বর্ষাকালে সড়ক খোঁড়া যাতে না হয় সে ব্যাপারে তারা সচেষ্ট।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শুধু জরিমানার বিধান যথেষ্ট নয়। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, “জনভোগান্তি তো এক ধরনের বড় অপরাধ। তাই দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”
বাসিন্দারা বলছেন, খাল দখলমুক্ত ও সংস্কার করা গেলে ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নত হবে এবং সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির সময় দুর্ভোগ কিছুটা হলেও কমবে। একইসঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে সমন্বয় জোরদার করা ও নীতিমালা কঠোরভাবে প্রয়োগ করা ছাড়া সমাধান সম্ভব নয়।
Leave a Reply