মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নবউদ্ভাবিত মহাকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘গোল্ডেন ডোম’ ঘিরে বৈশ্বিক পর্যায়ে উদ্বেগ দ্রুত বাড়ছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি শুধু একটি প্রযুক্তিনির্ভর প্রতিরক্ষা উদ্যোগ নয়—বরং ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার নতুন সূচক হয়ে উঠছে। উত্তর কোরিয়া থেকে শুরু করে চীন পর্যন্ত একাধিক শক্তিধর রাষ্ট্র এর কড়া সমালোচনায় মুখর হয়েছে।
‘গোল্ডেন ডোম’ মূলত একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মহাকাশভিত্তিক প্রতিরক্ষা ব্যূহ, যার প্রধান লক্ষ্য হাইপারসনিক ও পরবর্তী প্রজন্মের ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণ প্রতিহত করা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চলতি বছরের মধ্যেই এই ব্যবস্থাকে পূর্ণ মাত্রায় চালু করার ঘোষণা দিয়েছেন।
প্রকল্পের প্রাথমিক বাজেট নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫০০ কোটি ডলার, যা ভবিষ্যতে বিশ গুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে অনুমান করছেন সামরিক বিশ্লেষকরা। ওয়াশিংটনের এই উদ্যোগকে “উসকানিমূলক এবং অহংকারের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ” হিসেবে আখ্যা দিয়েছে উত্তর কোরিয়া। দেশটির ভাষায়,
“যুক্তরাষ্ট্র মহাকাশকে পরিণত করছে পারমাণবিক যুদ্ধক্ষেত্রে, যা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক এক পদক্ষেপ।”
উত্তর কোরিয়ার উদ্বেগ যে একেবারে ভিত্তিহীন নয়, তা বলছেন বিশ্লেষকরাও। তাঁদের মতে, ‘গোল্ডেন ডোম’ কার্যকর হলে উত্তর কোরিয়ার প্রচলিত অস্ত্রভাণ্ডার অনেকটাই অকার্যকর হয়ে পড়বে, যার ফলে দেশটি বিকল্প এবং আরও আগ্রাসী কৌশলের দিকে ঝুঁকতে পারে।
এদিকে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে,
“যুক্তরাষ্ট্র তার একক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গিয়ে বৈশ্বিক নিরাপত্তার ভারসাম্য ধ্বংস করছে।”
বেইজিং এই প্রকল্পের আক্রমণাত্মক সক্ষমতা নিয়ে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছে।বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, ‘গোল্ডেন ডোম’ চালুর মাধ্যমে শুরু হতে পারে নতুন এক অস্ত্র প্রতিযোগিতা—এবার মহাকাশকে কেন্দ্র করে। বিশ্ব ইতোমধ্যেই পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর মাঝে উত্তেজনার ভারে ভারাক্রান্ত। এবার সেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়তে পারে কক্ষপথেও।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালে উত্তর কোরিয়া নিজেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করে। তারপর থেকেই দেশটি নিয়মিত ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করে চলেছে, যার অনেকটাই সরাসরি যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্রদের হুমকি বিবেচনায় গৃহীত হচ্ছে। ‘গোল্ডেন ডোম’ প্রকল্প একদিকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য প্রযুক্তিগত সাফল্য হতে পারে, কিন্তু একইসঙ্গে এটি ভবিষ্যৎ মহাকাশ যুদ্ধ ও কৌশলগত টানাপোড়েনের দিকচিহ্নও বয়ে আনছে। প্রশ্ন উঠছে—এই প্রযুক্তি কি সত্যিই প্রতিরক্ষার জন্য, না কি এটি মহাকাশে একতরফা আধিপত্য কায়েমের নতুন কৌশল?
বিশ্ব এখন সেই উত্তরের অপেক্ষায়।
Leave a Reply