শিশুরা নিষ্পাপ—ফুলের মতো কোমল, পাপের ছোঁয়া থেকে একেবারেই মুক্ত। তারা কোনো গুনাহ করে না, তাদের জীবনে পাপ-পুণ্যের হিসেব থাকে না। তাই মৃত্যুর পর প্রাপ্তবয়স্কদের মতো তাদের আমলের ভিত্তিতে জান্নাত বা জাহান্নামের বিচার হয় না। ইসলাম শিশুদের পরকালীন অবস্থান নিয়ে অত্যন্ত করুণাময় দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে।
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন—
“যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের সন্তানরাও ঈমানে তাদের অনুসরণ করেছে, আমি তাদের সন্তানদেরকে জান্নাতে তাদের সাথে মিলিত করব। তাদের আমলের বিন্দুমাত্র কমতি করব না। প্রত্যেকেই নিজ কৃতকর্মের জন্য দায়ী।”
(সুরা তুর: ২১)
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ঈমানদার ও সৎকর্মশীল মা-বাবার সন্তানরা যদি স্বভাবতই শিশু অবস্থায় মারা যায়, আল্লাহ তাদেরকে মা-বাবার মর্যাদায় উন্নীত করে জান্নাতে মিলিত করে দেবেন— যদি তাদের আমল সে মর্যাদার উপযোগী না হয়।
নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেন,
“সেই সত্তার কসম, যার হাতে আমার জীবন! গর্ভচ্যুত শিশু তার নাড়ি ধরে তার মাকে জান্নাতে টেনে নিয়ে যাবে—যদি সে মা আল্লাহর সওয়াবের আশায় ধৈর্য ধারণ করে।”
(ইবনে মাজাহ: ১৩০৫)
আরেকটি বর্ণনায় এসেছে—
“সে তার পিতা-মাতার কাপড় ধরে জান্নাতে নিয়ে যাবে।”
(সহিহাহ: ৪৩২)
হাদিস অনুযায়ী, ঈমানদারদের শিশুরা জান্নাতের পাহাড়ে অবস্থান করে এবং তাদের তত্ত্বাবধান করেন নবী ইবরাহিম (আ.) ও তাঁর স্ত্রী সারা (আ.)। কিয়ামতের দিন এসব শিশুদের তাদের পিতা-মাতার কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
(সহিহুল জামে)
রসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর এক স্বপ্নে বলেন—
“আমি এক শ্যামল বাগানে প্রবেশ করলাম। সেখানে একটি লম্বা মানুষ, যাঁর মাথা দেখতে পাচ্ছিলাম না। তাঁর চারপাশে বিপুল সংখ্যক শিশু খেলছিল। ফেরেশতারা জানালেন—এ ব্যক্তি হলেন ইবরাহিম (আ.) এবং তাঁর চারপাশে থাকা শিশুরা হল তাদের, যারা নিষ্পাপ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে।”
(বুখারি: ৪২৯)
তাফসীর ইবনে কাসীরে উল্লেখ আছে, এমন কাফের শিশু বা যারা ইসলামের বিষয়ে কিছু জানার সুযোগ পায়নি, তাদেরকে কিয়ামতের দিন একটি বিশেষ পরীক্ষার মধ্যে রাখা হবে। যারা সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে, তারা জান্নাতে যাবে।
শিশুরা ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে এক ধরনের ‘বিশেষ নিরাপত্তা বলয়ের’ মধ্যে থাকে। তারা শুধু নিষ্পাপই নয়, বরং মা-বাবার জন্য জান্নাতে যাওয়ার সুপারিশকারীও হতে পারে। তবে ইসলাম নির্দিষ্ট কোনো শিশুকে জান্নাতি বা জাহান্নামি বলার অনুমতি দেয় না, যেমনটি কোনো প্রাপ্তবয়স্ককেও দেওয়া হয় না।
Leave a Reply