ইসলামের ইতিহাসে হজরত ওমর (রা.) ন্যায়পরায়ণতা, আল্লাহভীতি ও কঠোর জবাবদিহিতার উজ্জ্বলতম প্রতীক। তার শাসনামলে একদিন মদিনা মুনাওয়ারায় ভূমিকম্প হলে তিনি যে ঘোষণা দিয়েছিলেন, তা শুধু সে সময়ের মানুষকে নয়—আজও মুমিনদের হৃদয়ে গভীর রেখাপাত করে।
ইমাম ইবনে আবি শাইবা তার ‘মুসান্নাফ’-এ উল্লেখ করেন—ভূমিকম্প দেখা দিলে হজরত ওমর (রা.) মিম্বারে উঠে ঘোষণা দেন:
“হে মদিনার মানুষ! তোমরা এত দ্রুত কী পরিবর্তন করলে! আল্লাহর কসম! যদি ভূমিকম্প আবার ফিরে আসে, আমি তোমাদের মধ্য থেকে সরে যাব।”
(মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা, হাদিস ৩১২১৯)
অন্য এক বর্ণনায় ইমাম বায়হাকি উল্লেখ করেন—হজরত ওমর (রা.) বলেছিলেন,
“মানুষ যে গুনাহ সৃষ্টি করে, তার কারণেই ভূমিকম্প আসে।”
(শু‘আবুল ইমান, ৮/৩৬৪)
ওমর (রা.)-এর কথায় বোঝা যায়—প্রাকৃতিক বিপর্যয় শুধু প্রাকৃতিক নয়; এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে আত্মসমালোচনার আহ্বান। তার যুগে সমাজে কিছু গাফিলতি, প্রতারণা, বিলাসিতা ও নৈতিক দুর্বলতা বাড়তে শুরু করেছিল। তাই হজরত ওমর (রা.) ভূমিকম্পকে কেবল একটি কাঁপুনি হিসেবে দেখেননি—বরং ঈমানের জাগরণ হিসেবে দেখেছিলেন।
কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন—
“তোমাদের বিপদের কারণ তোমাদের নিজেদের কর্ম।” (শুরা: ৩০)
“আমি (বিভিন্ন) নিদর্শন পাঠাই ভীতি প্রদর্শনের জন্য।” (ইসরা: ৫৯)
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বহু হাদিসে সতর্ক করা হয়েছে—
সমাজে যখন অশ্লীলতা, অবিচার, প্রতারণা, যাকাত অবহেলা, পাপাচার বেড়ে যায়, তখন বিভিন্ন বিপর্যয় দেখা দেয়।
এমনকি কেয়ামতের আগে ভূমিকম্প বেড়ে যাওয়ার ভবিষ্যদ্বাণীও রয়েছে। (বুখারি ১০৩৬)
১. প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আধ্যাত্মিক দিক আছে।
২. গুনাহ বাড়লে আল্লাহর রহমত কমে যায়।
৩. নেতার দায়িত্ব কেবল প্রশাসন নয়—নৈতিক নেতৃত্বও।
৪. বিপদে আল্লাহর দিকে ফিরে আসাই নিরাপত্তার পথ।
আজ যখন পৃথিবী ভূমিকম্প, বন্যা, ঝড়-তুফান, রোগ-বালাইসহ নানা বিপর্যয়ে কেঁপে উঠছে—
তখন আমাদেরও প্রশ্ন করা উচিত:
আমরা কোথায় বদলে গেছি?
আমাদের কোন ভুলগুলো আল্লাহ আমাদের দেখাতে চাইছেন?
হজরত ওমর (রা.)-এর হৃদয় আল্লাহভীতিতে কেঁপে উঠেছিল—
আজকের দুনিয়ার মানুষের হৃদয়ে সেই কাঁপন আরও বেশি প্রয়োজন।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.