মালয়েশিয়ায় বিদেশি কর্মী, বিশেষত বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে দেশটির সরকার যে নতুন ১০ শর্ত জারি করেছে, তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মানবাধিকারকর্মী ও সাবেক এমপি চার্লস সান্তিয়াগো। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, এসব কঠোর শর্ত বড় ও প্রভাবশালী এজেন্সিগুলোকেই সুবিধা দেবে, ফলে এই খাতে একচেটিয়া ব্যবসা ও সিন্ডিকেটের পুনর্জাগরণ ঘটতে পারে।
চার্লস সান্তিয়াগো বলেন, “স্থায়ী অফিস, ১০ হাজার বর্গফুট জায়গা— এমন শর্তগুলো ছোট কিন্তু সৎ প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে পূরণ করা অসম্ভব। ফলে পূর্বে যারা এই খাত নিয়ন্ত্রণ করত, নতুন নিয়মে তারাই আবার একচ্ছত্র প্রভাব বিস্তার করবে।”
তবে তিনি স্বাগত জানিয়েছেন সেই ধারা, যেখানে অতীতে শ্রম আইন ভঙ্গ বা আর্থিক অপরাধে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনুমতি না দেয়ার বিধান রাখা হয়েছে।
অভিবাসী অধিকারকর্মী আদ্রিয়ান পেরেরা নতুন শর্তগুলোকে “উচ্চ স্তরের বাধা” হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেছেন,
“যদি মালয়েশিয়া নিজস্ব আইন কাঠামো সংস্কার না করে, তাহলে এসব শর্ত সিন্ডিকেট ও যোগসাজশী ব্যবসায়ী চক্রের জন্ম দেবে।”
তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, বিদেশি শ্রমিক নিয়োগে ‘শূন্য নিয়োগ ফি’ নীতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রকৃত সংস্কার শুরু করতে হবে।
মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুশন ইসমাইল গত সপ্তাহে জানান, দুই বছরের স্থগিতাদেশ শেষে সরকার কৃষি, বৃক্ষরোপণ ও খনি খাতে বিদেশি কর্মী কোটা পুনরায় চালু করছে। তবে এজন্য রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে কঠোর ১০টি শর্ত। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য—
অন্তত ৫ বছরের সন্তোষজনক কার্যক্রম পরিচালনার অভিজ্ঞতা
গত ৫ বছরে কমপক্ষে ৩ হাজার কর্মী বিদেশে পাঠানোর প্রমাণ
৩টি ভিন্ন দেশে কর্মী পাঠানোর অভিজ্ঞতা
প্রশিক্ষণ, মূল্যায়ন ও নিয়োগের বৈধ লাইসেন্স
জোরপূর্বক শ্রম, মানবপাচার বা অর্থপাচারের রেকর্ড না থাকা
১০ হাজার বর্গফুট আয়তনের স্থায়ী অফিস থাকা
অন্তত ৫ জন আন্তর্জাতিক নিয়োগকর্তার ইতিবাচক প্রশংসাপত্র থাকা
নতুন নীতির সমালোচনা করেছে মালয়েশিয়ার শ্রম উৎস দেশগুলোও। নেপাল সরকার স্পষ্ট জানিয়েছে, এই শর্ত তাদের শ্রমনীতি পরিপন্থি, তাই তারা এই শর্তে কোনো কর্মী পাঠাবে না।
চার্লস সান্তিয়াগো বলেন,
“বাস্তব সংস্কার শুরু হওয়া উচিত কর্মীদের প্রতি আচরণের মাধ্যমে, কোনো এজেন্সির ভবনের আকার দিয়ে নয়। সরকারকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে, নিয়োগকর্তারাই সব খরচ বহন করবে এবং কর্মীদের কাছ থেকে কোনো ফি নেওয়া হবে না।”
তিনি আরও পরামর্শ দেন, সরকারের উচিত এজেন্সির সংখ্যা সীমাবদ্ধ না করে খোলামেলা ও স্বচ্ছ নিয়োগব্যবস্থা গড়ে তোলা, যাতে রাজনৈতিক যোগাযোগ বা স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী এতে সুবিধা নিতে না পারে।