সাভারে বাবা আব্দুস সাত্তার হত্যার ঘটনায় তার মেয়ে জান্নাতুল জাহান শিফার দায় স্বীকার এবং ধর্ষণের অভিযোগ ঘিরে তদন্তে উঠে এসেছে একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য। আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে শিফা হত্যার দায় স্বীকার করলেও, মামলার তদন্তে তার বিরুদ্ধে এসেছে মাদকাসক্তি ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ। এসব নতুন তথ্যের ভিত্তিতে তদন্তকারীরা ধর্ষণের অভিযোগ নিয়েও পুনরায় যাচাই শুরু করেছে।
সাভার সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহিনুর কোভিদ জানিয়েছেন,
“প্রাথমিক তদন্তে শিফাকে মাদকাসক্ত মনে হয়েছে। যদিও এখনো মেডিকেল পরীক্ষার প্রতিবেদন আসেনি। শিফা ও তার সাবলেট হিসেবে থাকা অন্য দুই নারী, যাদের বিরুদ্ধেও মাদকাসক্তির অভিযোগ রয়েছে, তারা সবাই বিতর্কিত জীবনযাপন করতেন।”
পুলিশের দাবি, শিফা ছিলেন স্বাধীনচেতা, এবং পারিবারিক অনুশাসন মেনে চলতে চাইতেন না। তদন্তকারীদের ধারণা, শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে বাধা দেওয়াতেই তিনি তার বাবাকে হত্যা করেন। এছাড়া শিফা ও তার সাবলেট সঙ্গীদের বিরুদ্ধে সমকামিতা ও অনৈতিক কাজের অভিযোগও তদন্তাধীন রয়েছে।
অন্যদিকে, আব্দুস সাত্তারের বিরুদ্ধে শিফার ধর্ষণের অভিযোগ তদন্তের অংশ হিসেবে পুনরায় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জানা গেছে, শিফার মা ছিলেন সাত্তারের তৃতীয় স্ত্রী, যিনি মেয়ের পাঁচ বছর বয়সেই মারা যান। এরপর ২০১৯ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে বাবা তাকে যৌন নিপীড়ন করতেন বলে শিফার অভিযোগ। সর্বশেষ ২০২৩ সালে নাটোর আদালতে এ সংক্রান্ত একটি মামলা দায়ের করা হয়।
তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, ৭ মে রাতে শিফা তার বাবার খাবারে ঘুমের ওষুধ মেশান। গভীর রাতে, আব্দুস সাত্তার অচেতন হলে, ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তাকে হত্যা করেন। হত্যার পরদিন ৮ মে গ্রেপ্তার হন শিফা। এরপর ৯ মে ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আফরোজা সুলতানা সুইটির আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে তিনি হত্যার দায় স্বীকার করেন। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা জানান, শিফার জবানবন্দির পাশাপাশি ধর্ষণের অভিযোগের সত্যতা, হত্যার উদ্দেশ্য এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয় নিয়ে আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে রিমান্ডে নেওয়া হতে পারে। পুলিশ বলছে, এ ঘটনায় কোন পক্ষকে আগে থেকেই নির্দোষ বা দোষী ধরে না নিয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শেষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিকে ঘটনাটি ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা চলছে। একপক্ষে মেয়ের সাহসিকতার প্রশংসা, অন্যপক্ষে উঠে এসেছে অনৈতিকতার নানা প্রশ্ন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে গুজব ও অনুমানের ভিত্তিতে মন্তব্য না করাই উচিত।
তদন্ত চলছে। চূড়ান্ত সত্য উদঘাটনে অপেক্ষা এখন দেশের আইন ও বিচার ব্যবস্থার
Leave a Reply