মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে সপ্তাহান্তে হওয়া বাণিজ্য আলোচনা শেষে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন উভয়ই জানিয়েছে, আলোচনায় “উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি” হয়েছে। দুই দেশের পক্ষ থেকে আশা করা হচ্ছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং আসন্ন বৈঠকে বাণিজ্যচুক্তি সম্পন্ন করবেন, যা দুই দেশের দীর্ঘস্থায়ী বাণিজ্যযুদ্ধের উত্তাপ কমাবে।
বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে দক্ষিণ কোরিয়ার গিয়ংজু শহরে আসন্ন এপেক (APEC) সম্মেলনের ফাঁকে, যেখানে ২০১৯ সালের পর প্রথমবার মুখোমুখি হবেন দুই নেতা।
মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট জানান, আলোচনায় দুই পক্ষ একটি ‘ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি’ তৈরি করেছে, যা ট্রাম্প ও শি জিনপিং দক্ষিণ কোরিয়ার বৈঠকে চূড়ান্ত করবেন। তিনি এনবিসি নিউজকে বলেন, “আমরা এমন একটি সমঝোতার পথে আছি, যা চীনের রেয়ার আর্থ রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ স্থগিত করবে এবং ট্রাম্প ঘোষিত ১০০ শতাংশ শুল্ক এড়ানো সম্ভব হবে।”
বেসেন্ট আরও জানান, চীন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপণ্য, বিশেষ করে সয়াবিনের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ক্রয় করতে সম্মত হয়েছে, যা মার্কিন কৃষকদের জন্য বড় স্বস্তির খবর।
চীনের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বাণিজ্য আলোচক হে লিফেং জানান, দুই দেশ “প্রাথমিক ঐকমত্যে” পৌঁছেছে এবং এখন “বিস্তারিত বিষয়গুলো চূড়ান্ত করার” প্রক্রিয়া চলছে। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, উভয় পক্ষ এখন তাদের ঘরোয়া অনুমোদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে।
এই অগ্রগতির খবরে সোমবার এশীয় শেয়ারবাজারে বড় উল্লম্ফন দেখা যায়। জাপানের নিক্কেই ২২৫ সূচক বেড়েছে ২.১%, দক্ষিণ কোরিয়ার কসপি (KOSPI) বেড়েছে ২.৩%, আর হংকংয়ের হ্যাং সেনগ (Hang Seng) সূচক বেড়েছে প্রায় ০.৮৫%।
আসিয়ান সম্মেলন শেষে ট্রাম্প সোমবার জাপানে যান, যেখানে তিনি নবনিযুক্ত প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির সঙ্গে বৈঠক করবেন। এরপর বুধবার তিনি দক্ষিণ কোরিয়ায় শি জিনপিংয়ের সঙ্গে আলোচনার জন্য রওনা হবেন।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই চুক্তি বৈশ্বিক অর্থনীতিতে একটি বড় স্বস্তি বয়ে আনতে পারে, কারণ মার্কিন ও চীনা উত্তেজনা বিশ্বজুড়ে সরবরাহ চেইনে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে।
সম্প্রতি চীন ঘোষণা দেয়, ১ ডিসেম্বর থেকে রেয়ার আর্থ ম্যাগনেট ও সেমিকন্ডাক্টর উপাদান রপ্তানির ক্ষেত্রে লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করা হবে, যা বিশ্বব্যাপী উৎপাদন ব্যাহত করতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। এর জবাবে ট্রাম্প হুমকি দেন, চীনা পণ্যের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন।
এই পাল্টাপাল্টি অবস্থানের মধ্যেই ট্রাম্প-শি বৈঠক হতে যাচ্ছে, যা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পথে একটি বড় পদক্ষেপ হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।