তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি আলোচিত ফোন কলের অডিও রেকর্ডিং—যেখানে তিনি আন্দোলন দমনে ‘মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেন’—তার অডিওর সত্যতা যাচাই করেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রচারমাধ্যম বিবিসি ইনভেস্টিগেশনস (BBC Eye)।
২০২৫ সালের জুলাই-আগস্ট গণআন্দোলনের সময় রেকর্ড হওয়া ওই ফোন কলের অডিওতে শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যায়:
“তাদের (বিক্ষোভকারীদের) যেখানেই পাওয়া যাবে, গুলি করা হবে।”
ওই অডিও ক্লিপটি একটি উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে কথোপকথনের সময়কার বলে দাবি করা হচ্ছে। ফাঁস হওয়া এই রেকর্ডটিকে এখন মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপনের প্রস্তুতি চলছে।
বিবিসির অনুসন্ধানে উঠে এসেছে—বাংলাদেশের ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (NTMC)-এর রেকর্ড করা কলটি সম্ভবত ১৮ জুলাই গণভবন থেকে করা হয়েছিল। সেসময় আন্দোলনের চরম উত্তেজনা চলছিল, এবং বিক্ষোভকারীদের গুলিতে নিহতের ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় প্রশাসনের ওপর চাপ বাড়ছিল।
রেকর্ডিংটি নিয়ে বিবিসি কাজ করেছে যুক্তরাজ্যের অডিও ফরেনসিক প্রতিষ্ঠান ‘Earshot’-এর সঙ্গে। প্রতিষ্ঠানটি নিশ্চিত করেছে:
অডিওটি কৃত্রিম নয় বা সম্পাদনা করা হয়নি
রেকর্ডিংয়ের শব্দে বৈদ্যুতিক ফ্রিকোয়েন্সি, নিঃশ্বাস, সুর, উচ্চারণে কোনো বিকৃতি পাওয়া যায়নি
সম্ভবত এটি একটি ঘরে স্পিকারে বাজানো অবস্থায় রেকর্ড করা হয়েছে
বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (CID) নিজস্বভাবে ভয়েস ম্যাচিং করে নিশ্চিত করেছে, এটি প্রধানমন্ত্রীর পরিচিত কণ্ঠস্বরের সঙ্গে মিলেছে।
ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (ICT) শেখ হাসিনাসহ সাবেক সরকার ও পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মোট ২০৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছে, যাদের মধ্যে ৭৩ জন বর্তমানে আটক।
ব্রিটিশ মানবাধিকার আইনজীবী টবি কেডম্যান, যিনি আইসিটির উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন, বিবিসিকে বলেছেন:
“এই রেকর্ডিংগুলো হাসিনার ভূমিকা নির্ধারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেগুলো পরিষ্কার, যাচাই করা, এবং অন্যান্য প্রমাণের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।”
জাতিসংঘের তথ্য অনুসারে, জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের সময় প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ১,৪০০ মানুষ। বেশিরভাগই সাধারণ নাগরিক, যারা বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন।
এই ফোন কলের সত্যতা নিশ্চিত হওয়ায় এটি এখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচিত রাজনৈতিক ও মানবাধিকার ইস্যুতে পরিণত হয়েছে।
Leave a Reply