রাশিয়ার সর্ববৃহৎ বিমান হামলায় ইউক্রেনে অন্তত ১৩ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ‘সম্পূর্ণ পাগল’ বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি আরও ইঙ্গিত দিয়েছেন, মস্কোর বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হতে পারে।
রবিবার (২৬ মে) রাতে নিজের Truth Social প্ল্যাটফর্মে দেওয়া পোস্টে ট্রাম্প বলেন,
“আমি সবসময় পুতিনের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখতাম। কিন্তু এখন তার কিছু একটা হয়েছে, সে পুরোপুরি পাগল হয়ে গেছে!”
তিনি আরও লেখেন,
“আমি আগেই বলেছি—পুতিন কেবল ইউক্রেনের একটি অংশ নয়, বরং পুরো দেশটাই চায়। যদি তাই হয়, তবে সেটাই রাশিয়ার পতনের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।”
রাশিয়ার সর্বশেষ বিমান হামলাকে ইউক্রেনের ওপর যুদ্ধকালীন সময়ের সবচেয়ে বড় আক্রমণ বলে জানিয়েছে ইউক্রেনের বিমান বাহিনী। তারা জানিয়েছে, রুশ বাহিনী ২৯৮টি ড্রোন ও ৬৯টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে, যার মধ্যে ২৬৬টি ড্রোন ও ৪৫টি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করতে পেরেছে ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষা বাহিনী।
এই ভয়াবহ হামলায় ইউক্রেনজুড়ে ‘সন্ত্রস্ত পরিবেশ’ তৈরি হয়েছে বলে জানায় দেশটির জরুরি সেবা সংস্থা। নিহতদের মধ্যে ছিল ৮, ১২ ও ১৭ বছর বয়সী শিশুও। আহত হয়েছেন আরও ৬০ জনের বেশি।
এই নৃশংসতার জবাবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন,
“রাশিয়ার নেতৃত্বের ওপর কঠোর আন্তর্জাতিক চাপ ছাড়া এই বর্বরতা থামানো যাবে না। আমেরিকার নীরবতা ও বিশ্বের অন্যান্য দেশের উদাসীনতাই পুতিনকে উৎসাহিত করছে।”
তিনি আরও বলেন, “নিষেধাজ্ঞা অবশ্যই সাহায্য করবে।”
এর আগে উত্তর নিউ জার্সি থেকে হোয়াইট হাউসে ফেরার পথে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন,
“আমি পুতিনের সঙ্গে অনেকদিন ধরেই পরিচিত, কিন্তু এখন সে যেভাবে শহরে শহরে রকেট হামলা চালাচ্ছে এবং মানুষ হত্যা করছে—আমি তা একেবারেই পছন্দ করছি না।”
তিনি আরও জানান, “নতুন নিষেধাজ্ঞা বিবেচনায় রয়েছে।”
তবে ট্রাম্প আবারও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির প্রতি সমালোচনামুখর ছিলেন। তিনি বলেন,
“জেলেনস্কি তার দেশের উপকার না করে কেবল সমস্যা সৃষ্টি করছে। যা সে বলে, সব কিছু সমস্যা সৃষ্টি করে। এটা বন্ধ হওয়া দরকার।”
রাশিয়ার সর্বশেষ হামলা ইউরোপেরও তীব্র নিন্দা কুড়িয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান কায়া ক্যালাস বলেন, “রাশিয়ার ওপর আন্তর্জাতিক সমাজের সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগ করতে হবে।”
জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোহান ওয়াডেফুল বলেন, “পুতিন শান্তি চান না, যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চান। আমরা তা মেনে নিতে পারি না।”
তিনি আরও জানান, “ইউরোপীয় পর্যায়ে আরও নিষেধাজ্ঞা অনুমোদনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।”
এরই মধ্যে রাশিয়া ও ইউক্রেন বন্দি বিনিময়ের চূড়ান্ত ধাপ সম্পন্ন করেছে। তুরস্কে ১৬ মে হওয়া আলোচনার ভিত্তিতে, প্রতিপক্ষের হাতে আটক ৩০৩ জন করে সেনা বিনিময় করেছে দুই দেশ, যা ২০২২ সালের পূর্ণমাত্রিক যুদ্ধ শুরুর পর সর্ববৃহৎ বন্দি বিনিময়।
এছাড়া গত সপ্তাহে ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে দুই ঘণ্টার ফোনালাপ হয়েছে, যেখানে তারা ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতির উদ্দেশ্যে আলোচনা শুরু করতে সম্মত হন বলে দাবি করেন ট্রাম্প। তবে পুতিন এখনও যুদ্ধ থামানোর বিষয়ে কোনো পরিষ্কার প্রতিশ্রুতি দেননি।
Leave a Reply