দুর্গম পাহাড়ি এলাকা ও জটিল ভৌগোলিক অবস্থানের সুযোগ নিয়ে অবৈধ অস্ত্র ঢুকছে পার্বত্য চট্টগ্রামে। এতে অশান্ত হয়ে উঠছে পাহাড়ি জনপদ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, মিয়ানমার ও ভারত থেকে অন্তত চারটি রুট ব্যবহার করে অস্ত্র প্রবেশ করছে রাঙামাটিতে। এসব অস্ত্র পাচারে ব্যবহার হচ্ছে সাংকেতিক ভাষা ও বিশেষ বার্তা বিনিময়ের কৌশল।
পুলিশ জানিয়েছে, নানা চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও যৌথবাহিনী নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে এবং নজরদারি আরও জোরদার করা হয়েছে। তবে দুর্গম পাহাড়, জঙ্গল ও নদীপথে অপরাধীদের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্যমতে, অস্ত্র প্রবেশের একটি রুট মিয়ানমার থেকে ভারতের মিজোরাম হয়ে থাচি, লুলংছড়ি, চাকপতিঘাট, বসন্তপাড়া হয়ে রাঙামাটিতে আসে। আরেকটি রুট বান্দরবান থেকে বাঙ্গালহালিয়া, রাইখালী বাজার, বড়ইছড়ি হয়ে কাউখালী পর্যন্ত বিস্তৃত। তৃতীয় রুটে মিয়ানমার-মিজোরাম সীমান্ত হয়ে বরকল, শুকনাচারী, তালুকদারপাড়া, সারোয়াতলী হয়ে বাঘাইছড়িতে অস্ত্র পৌঁছায়। চতুর্থ রুট মিয়ানমারের পুকজিং ও মানপাড়া সীমান্ত পেরিয়ে সাজেকের লংকর পয়েন্টে পৌঁছায়।
ভারতের গণমাধ্যম জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে দেশটিতে এসব রুটে পাঁচটি বড় অস্ত্র চালান আটক হয়েছে। এসব চালানে একে-৪৭, এম-১৬, গ্রেনেড, গ্রেনেড লঞ্চারসহ ভারী অস্ত্র ছিল।
পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি আঞ্চলিক সংগঠনের সাবেক দুই সদস্য জানান, অস্ত্র পাচারে সাংকেতিক ভাষা ব্যবহার করা হয় এবং নির্দিষ্ট টিম এ কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকে। তারা আরও জানান, এসব অস্ত্রের বড় অংশ আসে থাইল্যান্ড ও মিয়ানমার থেকে, পরে ভারত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। মিয়ানমার থেকে তিন লাখ টাকায় কেনা অস্ত্র বাংলাদেশে এসে ছয় লাখ টাকায় বিক্রি হয়—একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট পুরো নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ করে।
এই অস্ত্রের অবাধ প্রবাহে পাহাড়ে আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর মধ্যে সংঘাত বাড়ছে, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাও নিশানায় পড়ছেন। এখন পর্যন্ত অন্তত ৪২ জন নিরাপত্তা সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন।
রাঙামাটির পুলিশ সুপার ড. এস এম ফরহাদ হোসেন বলেন, “পাহাড়ের সীমান্তগুলো স্থল, লেক ও নদীপথে বিস্তৃত; ফলে নিয়ন্ত্রণে জটিলতা তৈরি হয়। তবে অস্ত্র বা সন্ত্রাসী কার্যক্রমের তথ্য পেলে যৌথভাবে অভিযান চালানো হচ্ছে।”
রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ বলেন, “সন্ত্রাসীরা নানা ছদ্মনামে কার্যক্রম চালালেও সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিজিবি সমন্বিতভাবে অভিযান পরিচালনা করছে। একসঙ্গে কাজ করলেই অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।”
গত এক বছরে পাহাড়ে সশস্ত্র সংঘাতে অন্তত ৫০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। স্থানীয়রা আশা করছেন—এই সংঘাতের অবসান ঘটলে আবারও শান্তি ফিরবে পার্বত্য চট্টগ্রামে।
Leave a Reply