সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে জাতির উদ্দেশে দেয়া এক গুরুত্বপূর্ণ ভাষণে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন—পাক-অধিকৃত কাশ্মীর (PoK) ফেরত না দিলে ইসলামাবাদের সঙ্গে কাশ্মীর নিয়ে কোনো আলোচনা হবে না। শুধু তাই নয়, পাকিস্তানের মাটিতে সক্রিয় সন্ত্রাসী অবকাঠামো পুরোপুরি ধ্বংস না করা পর্যন্ত ভারত আলোচনার টেবিলে বসবে না বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।
২২ মিনিটের এই ভাষণে মোদি পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন, সন্ত্রাসবাদকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়ার অভিযোগে। তিনি বলেন, “সন্ত্রাস একদিন তোমাদের নিজেকেই ধ্বংস করবে।” সেই সঙ্গে সাবধান করে দিয়ে জানান, ভারত কখনও কাশ্মীর ইস্যুকে বিচ্ছিন্ন করে দেখে না এবং এটি কেবল সীমান্ত সংঘর্ষের বিষয় নয়।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “সন্ত্রাস ও সংলাপ একসঙ্গে চলতে পারে না। রক্ত ও পানি একসঙ্গে প্রবাহিত হতে পারে না। যদি কখনও আলোচনা হয়, তাহলে তা কেবল সন্ত্রাস এবং পাক-অধিকৃত কাশ্মীরকে ঘিরেই হবে।”
চারদিনের টানা সীমান্ত সংঘর্ষের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় শনিবার রাতে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। এর পরপরই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানান, ভারত ও পাকিস্তান শিগগিরই আলোচনা শুরু করতে পারে। দুই দেশের ডিরেক্টর জেনারেলস অব মিলিটারি অপারেশনস (DGMOs)-এর মধ্যেও সোমবার একটি ফোনালাপ হয়।
তবে ইসলামাবাদ আলোচনার আগেই কয়েকটি শর্ত দিয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম—পহেলগাম হামলার পর ভারত যে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করেছিল, তা পুনরায় কার্যকর করতে হবে। তবে ভারত সরকার এ ধরনের দাবিকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে। এনডিটিভিকে দেয়া এক সূত্র জানায়, “যুদ্ধবিরতি শর্তসাপেক্ষ হলেও ৬৫ বছরের পুরনো পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে ভারতের অবস্থানে কোনো পরিবর্তন আসবে না।” একই সঙ্গে জানানো হয়, জম্মু ও কাশ্মীর প্রসঙ্গে ভারতের অবস্থান ‘অপরিবর্তনীয়’ এবং এ বিষয়ে কোনো শর্তও প্রযোজ্য নয়।
২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগামে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। ভারত অভিযোগ তোলে, এই হামলার পেছনে পাকিস্তানের প্রত্যক্ষ মদদ রয়েছে। এর জবাবে ভারত সীমান্তে চালায় ‘অপারেশন সিন্দুর’, যার মাধ্যমে সন্ত্রাসী ঘাঁটি লক্ষ্য করে অভিযান চালানো হয়। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানও সীমান্তে হামলা চালায়, এবং দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষ আরও তীব্র আকার ধারণ করে।
পাকিস্তান বরাবরের মতোই ভারতের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, পাকিস্তান কোনো জঙ্গি গোষ্ঠীকে আশ্রয় বা অর্থায়ন করে না এবং ভারতের অভ্যন্তরে হামলার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
কিন্তু দিল্লি এবার আগের চেয়ে অনেক কঠোর। প্রধানমন্ত্রী মোদি তার ভাষণে স্পষ্ট করে দিয়েছেন—দীর্ঘমেয়াদি শান্তির জন্য আগে সন্ত্রাস নির্মূল হোক, এরপর হবে আলোচনার কথা।
Leave a Reply