পদ্মা সেতু উদ্বোধনের তিন বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো মোবাইল ফোন রিচার্জে এক শতাংশ হারে ‘সারচার্জ’ আদায় চলছে। ২০১৬ সালে পদ্মা সেতু নির্মাণের তহবিল জোগাড়ে চালু হওয়া এই করের আওতায় গত নয় বছরে সরকার সংগ্রহ করেছে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকারও বেশি রাজস্ব। আসন্ন বাজেটে এই কর প্রত্যাহারের জোর দাবি তুলেছে দেশের মোবাইল অপারেটরগুলো।
মোবাইল অপারেটরদের তথ্যানুসারে, ২০১৬ থেকে ২০২৫—এই সময়ে টেলিকম খাত সরকারকে দিয়েছে প্রায় ২ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব, যার মধ্যে সারচার্জ বাবদ এসেছে আড়াই হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি।
রবির চিফ করপোরেট ও রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার সাহেদ আলম বলেন,
“পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য যে এক শতাংশ সারচার্জ নেয়া শুরু হয়েছিল, সেটি এখনো বহাল রয়েছে। প্রকল্প শেষ হলেও গ্রাহকরা এখনো এই কর দিচ্ছেন।”
বাংলালিংকের করপোরেট ও রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান জানান,
“১০০ টাকা রিচার্জে ৫৪ টাকা সরাসরি সরকারের কোষাগারে চলে যাচ্ছে—এই করের বোঝা সেক্টর ও গ্রাহক উভয়ের জন্যই চাপ সৃষ্টি করছে।”
গ্রামীণফোনের করপোরেট চিফ তানভীর মোহাম্মদ বলেন,
“পদ্মা সেতু এখন বাস্তবতা। তাই সময় এসেছে এই সারচার্জ প্রত্যাহার করার, যা সেক্টরটিতে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।”
বর্তমানে মোবাইল গ্রাহকদের কাছ থেকে সরকার সাপ্লিমেন্টারি ডিউটি, ভ্যাট ও সারচার্জ মিলিয়ে প্রায় ৩৯% হারে কর আদায় করছে। এ ছাড়া সিম কিনতে এখনো দিতে হচ্ছে ৩০০ টাকা। টেলিকম সেক্টরের দাবি, এত উচ্চহারে কর বিশ্বে বিরল এবং এটি ইন্টারনেট ও ভয়েস সেবার খরচ কমাতে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অনেক গ্রাহক অভিযোগ করছেন,
“একটি সপ্তাহের মোবাইল ডেটা প্যাকেজে যেই টাকা লাগে, তাতে তো একটি বাসায় মাসব্যাপী ব্রডব্যান্ড চালানো যায়।”
উল্লেখ্য, এর আগেও যমুনা সেতু নির্মাণের সময় বাস, ট্রেন ও সিনেমা টিকিটে ‘সারচার্জ’ বসানো হয়েছিল। তবে প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষে সেই কর উঠিয়ে নেয়া হয়।
তবে পদ্মা সেতুর ক্ষেত্রে এখনো তেমন কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি। বরং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব সাফ জানিয়েছেন,
“এই খাতে কোনো ভর্তুকি দেওয়া হবে না।”
বর্তমানে দেশের চারটি মোবাইল অপারেটর মিলে ১৯ কোটির বেশি গ্রাহককে সেবা দিচ্ছে। টেলিকমখাত বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে হলে প্রথমেই এই খাতের ওপর থেকে অপ্রয়োজনীয় কর ও শুল্কের বোঝা কমাতে হবে।
Leave a Reply