1. arshinagargroup75@gmail.com : Rofiqul Islam : Rofiqul Islam
মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:২৯ পূর্বাহ্ন

নিত্যদিনের নৃশংসতা: খাদ্যের অপেক্ষায় থাকা ৭২ ফিলিস্তিনি নিহত, যুদ্ধবিরতির আহ্বান জোরালো হচ্ছে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • Update Time : সোমবার, ৩০ জুন, ২০২৫
  • ৬৭ Time View

গাজার মানবিক পরিস্থিতি প্রতিনিয়ত ভয়াবহ হয়ে উঠছে। রোববার ভোর থেকে শুরু করে একদিনেই ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৭২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে মেডিকেল সূত্র। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন খাবার সংগ্রহ করতে যাওয়া সাধারণ মানুষও।

আল জাজিরার গাজা সিটি প্রতিনিধি মোআথ আল-কাহলুত জানান, গাজার জেইতুন ও সাবরা পাড়া এবং আল-জাওইয়া বাজারে চালানো ইসরায়েলি বিমান হামলার পর আহতদের ঢল নামে আল-আহলি হাসপাতালে। সেখানে বেড না থাকায় অনেকেই মেঝেতে পড়ে কাতরাচ্ছেন। চরম ওষুধ সংকটের কারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কার্যত অসহায়।

ইসরায়েলি বাহিনী পূর্ব গাজায় লিফলেট ছড়িয়ে বাসিন্দাদের দক্ষিণে চলে যেতে বলছে। কিন্তু এসব সতর্কতার পরপরই চলছে ভয়াবহ হামলা—ফলে বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা।

এদিকে বিতর্কিত ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (GHF)’ পরিচালিত খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রের আশেপাশে ইসরায়েলি সেনারা নিয়মিত গুলি চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শনিবার (২৯ জুন) রাফাহর উত্তরে GHF-এর একাধিক কেন্দ্রে গুলি চালিয়ে অন্তত পাঁচজন খাদ্যগ্রহীতা ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। মে মাসের শেষদিক থেকে এখন পর্যন্ত ওই এলাকায় এ ধরনের হামলায় নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫৮০ জন, আহত ৪,০০০-এরও বেশি।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হা’আরেতজ-এর এক প্রতিবেদনে কয়েকজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেনার উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, GHF-এর আশপাশে জড়ো হওয়া নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে গুলি চালাতে সরাসরি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সাবেক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনজীবী জিওফ্রে নাইস বলেন, “যেখানে ত্রাণ দেয়া হচ্ছে, সেখানে শত শত নিরীহ মানুষকে গুলি করে হত্যা—এটা মানবাধিকারের চূড়ান্ত লঙ্ঘন।”

অপরদিকে, গাজার শিশুরা এখন অনাহারে মৃত্যুর মুখে। অস্ট্রেলীয় নার্স ক্রিস্টি ব্ল্যাক জানান, অনেক মা দুধ উৎপাদন করতে পারছেন না—কারণ পর্যাপ্ত খাবার পাচ্ছেন না। ফলে নবজাতক ও শিশুদের পুষ্টিহীনতায় মৃত্যু বাড়ছে।

তিনি বলেন, “আমরা এমন শিশুও দেখছি যাদের বয়স ৯ বা ১০, কিন্তু শরীরের গড়ন দুই বছর বয়সীর মতো। কিছু শিশুকে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ ঘেঁটে খাবার খুঁজতে দেখা যাচ্ছে।”

এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে যুদ্ধবিরতির দাবি জোরালো হচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক Truth Social পোস্টে বলেন, “গাজায় চুক্তি করুন, জিম্মিদের ফিরিয়ে আনুন।” তিনি আশা প্রকাশ করেন, এক সপ্তাহের মধ্যেই যুদ্ধবিরতি হতে পারে।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সরাসরি মন্তব্য না করলেও, গোপনে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন। মার্চে যুক্তরাষ্ট্র একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছিল, যেটি ইসরায়েল লঙ্ঘন করে আবারও গাজায় হামলা শুরু করে।

এছাড়া, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন-ইসরায়েলি হামলা এবং পরবর্তী সমঝোতা যুদ্ধবিরতির পথে আরেকটি সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে বলে মত বিশ্লেষকদের।

আলোচনার মধ্যে নেতানিয়াহুর দুর্নীতিমামলার শুনানি স্থগিত করেছে জেরুজালেম জেলা আদালত। তিনি যুক্তরাষ্ট্র, মোসাদ প্রধান ও সামরিক গোয়েন্দা কর্মকর্তার ‘গোপন কারণ’ উল্লেখ করে শুনানি পেছানোর আবেদন করেছিলেন।

মন্তব্যে ট্রাম্প বলেন, “নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে যা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ পাগলামি। আমরাও (যুক্তরাষ্ট্র) এই নাটক সহ্য করব না।”

এই মুহূর্তে গাজা পরিস্থিতি বিশ্ব বিবেকের সামনে সবচেয়ে বড় মানবিক প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে—বিশেষ করে শিশু, নারী ও নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের মৃত্যু যেখানে প্রতিদিনের ঘটনা।

সূত্র আল জাজিরা

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © arshinagar tv 2025
Design & Develop BY Coder Boss