বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান অস্থিরতা মানবিক সংকটকে আরও গভীর করে তুলছে। আন্তর্জাতিক উদ্ধার কমিটি (আইআরসি)-এর ২০২৬ সালের ‘এমার্জেন্সি ওয়াচলিস্ট’–এ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে আবারও শীর্ষে রয়েছে সুদান ও ফিলিস্তিন। মঙ্গলবার প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ–পরবর্তী নিয়মভিত্তিক বিশ্বব্যবস্থার জায়গা নিচ্ছে এক ‘নতুন বিশ্ব বিশৃঙ্খলা’—যেখানে ভূরাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা, বদলে যাওয়া জোট ও স্বার্থনির্ভর চুক্তি মানবিক সহায়তাকে দুর্বল করে দিচ্ছে।
আইআরসির প্রেসিডেন্ট ডেভিড মিলিব্যান্ড বলেন, “বিশৃঙ্খলা থেকেই আরও বিশৃঙ্খলা জন্ম নেয়। ক্ষমতাবানদের জরুরি পদক্ষেপ ছাড়া ২০২৬ সাল এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বিপজ্জনক বছর হয়ে উঠতে পারে।” প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংকট বাড়ছে অথচ তহবিল কমছে—এই দ্বিমুখী চাপ সবচেয়ে দুর্বল জনগোষ্ঠীকে গভীর বিপদে ফেলছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ভেটোর ব্যবহার বৃদ্ধি সুদান ও ফিলিস্তিনে কার্যকর পদক্ষেপকে বাধাগ্রস্ত করেছে। সুদানে যুদ্ধবিরতির উদ্যোগে বাধা এসেছে, আর গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব একাধিকবার ভেটোর মুখে পড়েছে—যদিও পরে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে একটি শান্তি পরিকল্পনা আনা হয়।
ওয়াচলিস্টে থাকা ২০টি দেশ (যার মধ্যে দক্ষিণ সুদান, ইথিওপিয়া, হাইতি, মিয়ানমার ও কঙ্গোও আছে) বিশ্বের জনসংখ্যার মাত্র ১২ শতাংশ, কিন্তু বিশ্বব্যাপী প্রায় ৩০ কোটির মধ্যে ৮৯ শতাংশ মানবিক সহায়তাপ্রয়োজনীয় মানুষ এখানেই বাস করে। প্রতিবেদনে উল্লেখ, ১১ কোটি ৭০ লাখ মানুষ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত, ৪ কোটি মানুষ তীব্র খাদ্যসংকটে, অথচ মানবিক তহবিল ৫০ শতাংশ কমে গেছে—ফলে সহায়তা কার্যক্রম প্রয়োজনের সঙ্গে তাল মিলাতে পারছে না।
সুদানে প্রায় তিন বছর ধরে সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক আরএসএফের সংঘাতে ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আইআরসি বলছে, সংঘাতে দেড় লাখের বেশি মানুষ নিহত, ১ কোটি ২০ লাখের বেশি বাস্তুচ্যুত, আর ৩ কোটি ৩০ লাখ মানুষের সহায়তা প্রয়োজন। প্রতিবেদনে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, আঞ্চলিক পৃষ্ঠপোষকদের ভূমিকা সংকট দীর্ঘায়িত করছে—যদিও নির্দিষ্ট নাম উল্লেখ করা হয়নি।
ফিলিস্তিন টানা তৃতীয়বার দ্বিতীয় স্থানে। গাজায় সাম্প্রতিক সংঘাতে বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে; পাশাপাশি পশ্চিম তীরে বসতি-সংক্রান্ত সহিংসতাও বাড়ছে। আইআরসি সতর্ক করেছে, সংঘাতের তীব্রতা কমলেও গাজায় বেঁচে থাকার সংগ্রাম চলবে। ২০২৫ সালের শেষ দিকে সেখানে ৬ লাখ ৪১ হাজার মানুষ ‘দুর্ভিক্ষ বা চরম খাদ্য অনিশ্চয়তা’তে পড়তে পারে। সহায়তা প্রবেশে কড়াকড়ি থাকায় পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে।
প্রতিবেদনটি বলছে, দায়মুক্তি বিপজ্জনক মাত্রায় পৌঁছেছে। গত বছর মানবিক কর্মীদের জন্য সবচেয়ে প্রাণঘাতী ছিল—স্কুল, হাসপাতাল ও জরুরি অবকাঠামোয় হামলার কারণে। আইআরসি জোর দিয়ে বলেছে, দ্রুত রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও অর্থায়ন না বাড়ালে বিশ্বব্যাপী মানবিক সংকট আরও তীব্র হবে।
সূত্র: আল জাজিরা
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.