ধুলোবালির মধ্যে ছড়িয়ে থাকা কিছু আটা। আর সেই আতাই কুড়িয়ে নিচ্ছে গাজার ক্ষুধার্ত মানুষ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক হৃদয়বিদারক ভিডিওতে ফুটে উঠেছে এই মানবিক বিপর্যয়ের বাস্তবতা, যা প্রকাশ করেছে তুর্কি সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড।
ইসরাইলি অবরোধ এবং পরিকল্পিত খাদ্য সংকটের ফলে গাজার জনগণের জীবনযাত্রা দুর্ভিক্ষের মতো অবস্থায় পৌঁছেছে। লাখো মানুষ অনাহারে দিন কাটাচ্ছে, এক টুকরো রুটির জন্যও মরিয়া হয়ে উঠছে তারা।
গাজার কিছু এলাকায় ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত সংস্থা জিএইচএফ থেকে সীমিত ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় সামান্য। তারও ওপর ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে ভিড় জমালে সেখানে নির্বিচারে গুলি চালাচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী। জাতিসংঘ জানায়, ইতোমধ্যে এসব গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন ৮ শতাধিক ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনি।
তবু খাদ্যের আশায় জীবন বাজি রেখে মানুষ জড়ো হচ্ছে ত্রাণকেন্দ্রের সামনে। এমনকি রাস্তার ধুলোয় পড়ে থাকা আটা কুড়িয়ে নিতেও বাধ্য হচ্ছে তারা।
টিআরটি ওয়ার্ল্ড জানায়, গত শুক্রবার (১৮ জুলাই) এমনই এক ভিডিও তাদের হাতে আসে—যেখানে দেখা যায়, ধুলোবালির মধ্যে পড়ে থাকা দূষিত আটা হাতে নিয়ে সংগ্রহ করছে গাজার বাসিন্দারা। ইসরাইলি অবরোধের ফলে মানুষের সামনে এখন এমন বিভীষিকাময় বাস্তবতাই নিত্যদিনের চিত্র।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, খাদ্য সংকটের কারণে অপুষ্টিতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ভয়াবহ হারে বেড়েছে। হাসপাতালে জায়গা নেই, ওষুধ নেই, চিকিৎসা সামগ্রী নেই। অনেক রোগী এতটাই দুর্বল যে দাঁড়াতেও পারছেন না। স্মৃতিশক্তি হারানো থেকে শুরু করে অচেতন অবস্থায় আসছেন বহু মানুষ।
আল শিফা হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন শত শত অপুষ্টিতে আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছেন। কিন্তু চিকিৎসা দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আর নেই। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, এমন সংকট আগে কখনও দেখেননি।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) বলছে, গাজায় বর্তমানে যে খাদ্য সংকট চলছে, তা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। ডব্লিউএফপির উপনির্বাহী পরিচালক কার্ল স্কাউ বলেন, “পরিস্থিতি এতটাই খারাপ, যা আমি আমার কর্মজীবনে আগে কখনও দেখিনি।”
তিনি জানান, গাজায় ৯০ হাজার শিশু জরুরি পুষ্টি সহায়তা ছাড়া বেঁচে থাকতে পারবে না। প্রতি তিনজন গাজাবাসীর একজন দিনের পর দিন না খেয়ে থাকছে।
ইসরাইলি বাহিনীর হামলা থামেনি। শনিবার (১৯ জুলাই) গাজার ওপর ৬৫২তম দিনের মতো বিমান হামলা চালানো হয়েছে। এতে অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ৩২ জন ইসরাইলি গুলিতে প্রাণ হারান রাফাহর জিএইচএফ ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় নিহত হয়েছেন ৫৮ হাজার ৬৬৭ জন, আহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৯৭৪ জন।
Leave a Reply