ঢাকার সিটি কলেজ এলাকা থেকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের দিকে আবারও দুটি বুলডোজার নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সোমবার সকালে দেখা যায়, একদল তরুণ এগুলোর সঙ্গে রয়েছে এবং পরিচয় জিজ্ঞেস করলে তারা জানান বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সদস্য তারা। এর আগে চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি ‘বুলডোজার মিছিল’ থেকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়ির অধিকাংশ অংশ ভেঙে ফেলা হয়েছিল, যা দেশে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছিল।
এদিকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে রাজধানীজুড়ে বিশেষ করে ট্রাইব্যুনাল–সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সকাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির পায়রা চত্বরে বহু মানুষ জড়ো হয়ে সরাসরি সম্প্রচার দেখছেন। তারা প্রকাশ্যে জানান যে, আন্দোলন দমনে সংঘটিত গণহত্যার দায়ে শেখ হাসিনার সর্বোচ্চ শাস্তি—মৃত্যুদণ্ড—চান তারা, এবং পলাতক অবস্থায় থাকা শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করতে সরকারের প্রতি দাবি জানান।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। পুনর্গঠনের পর প্রথম মামলাটি ছিল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেই, যা পরে বিস্তৃত হয়। ১ জুন প্রসিকিউশন আনুষ্ঠানিকভাবে শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করে, যা ট্রাইব্যুনাল আমলে নেয়। পাঁচটি ভিন্ন অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়, যার মধ্যে রয়েছে—‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলা, আন্দোলন দমনে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ, রংপুরে ছাত্র আবু সাঈদকে হত্যা, চানখাঁরপুলে ছয়জনকে হত্যা এবং আশুলিয়ায় ছয়জনকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা।
মামলার দীর্ঘ বিচারপ্রক্রিয়ায় সাবেক আইজিপি মামুন পরে দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন করেন এবং ট্রাইব্যুনাল সেটি মঞ্জুর করে। তিনি মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্যও প্রদান করেন। গত ২৩ অক্টোবর অ্যাটর্নি জেনারেল সমাপনী বক্তব্যে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের সর্বোচ্চ শাস্তি চান। প্রসিকিউশনের জবাবে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী তাদের খালাস প্রার্থনা করেন। শেষ পর্যন্ত ১৩ নভেম্বর রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ করা হয়।
এর মধ্যেই ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ফের বুলডোজারের উপস্থিতি পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে, আর জনগণের নজর এখন ট্রাইব্যুনালের দিকে—ঐতিহাসিক রায় যে কোনো মুহূর্তেই ঘোষণা হতে পারে।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.