বাংলাদেশে অনলাইন জুয়া ও পর্নোগ্রাফির ভয়াবহ বিস্তারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সরকার। ইতোমধ্যে ফেসবুক, টিকটক ও গুগলকে চিঠি পাঠিয়ে এসব প্ল্যাটফর্মে পর্নোগ্রাফি ও অনলাইন জুয়ার সাইট বা বিজ্ঞাপন বন্ধের অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।
সরকারি হিসাবে, দেশে বর্তমানে ৫০ লাখের বেশি মানুষ অনলাইন জুয়ায় আসক্ত। তাদের মধ্যে অনেকে সর্বস্ব হারিয়ে অপরাধ ও সামাজিক অবক্ষয়ের দিকে ঝুঁকছেন।
বিটিআরসির পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে—
পর্নোগ্রাফি ও অনলাইন জুয়া পারিবারিক বিরোধ, আত্মহত্যা, আর্থিক ক্ষতি ও নৈতিক অবক্ষয়ের অন্যতম কারণ হয়ে উঠছে। এসব কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে নিষিদ্ধ ও শাস্তিযোগ্য।
প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানান,
“বিটিআরসি নিয়মিতভাবেই প্ল্যাটফর্মগুলোকে ই-মেইল পাঠাচ্ছে এবং বিষয়টি নিয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত আছে।”
ক্রিকেটসহ বিভিন্ন খেলাকে ঘিরে অনলাইন জুয়া এখন ব্যাপক আকার নিয়েছে।
বিভিন্ন স্পোর্টস পেজ ও অ্যাপে “প্রতি বল, প্রতি বাউন্ডারি, প্রতি উইকেটে বাজি” ধরে জুয়ার বিজ্ঞাপন ছড়ানো হচ্ছে।
এই প্রবণতায় তরুণ প্রজন্মের অনেকেই দ্রুত অর্থ উপার্জনের মোহে জড়িয়ে পড়ছেন— যা শেষ পর্যন্ত তাদের আর্থিক ধ্বংস ডেকে আনছে।
বিটিআরসি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ছাড়াও মোবাইল অপারেটর ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (MFS) প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনলাইন জুয়া রোধে কঠোর নির্দেশ দিয়েছে।
রবির করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক শাহ মো. ফজলে খুদা বলেন,
“ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (NTMC) মাধ্যমে এসব সাইট ব্লক করা হচ্ছে।”
উপায়-এর হেড অব করপোরেট অ্যাফেয়ার্স মোহাম্মদ সামসুজ্জোহা জানান,
“অনলাইন জুয়ার সাইটগুলোর ডাটা অ্যাক্সেস বন্ধ করা সম্ভব। বিকল্প লেনদেন চ্যানেলগুলোও নিয়ন্ত্রণে আনা জরুরি।”
সম্প্রতি বিটিআরসির এক সভায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মতো অনলাইন জুয়া ও পর্নোগ্রাফি দমনকারী একটি স্বতন্ত্র সংস্থা গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
সরকার মনে করছে, সামাজিক মূল্যবোধ ও পারিবারিক স্থিতি রক্ষায় এখনই শক্ত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি— নইলে অনলাইন জুয়া ও পর্নোগ্রাফি বাংলাদেশের তরুণ সমাজের জন্য ভয়াবহ হুমকি হয়ে উঠতে পারে।