দেশীয় পশুতেই পূরণ হবে কোরবানির চাহিদা, আমদানির প্রয়োজন নেই: জানালেন উপদেষ্টা ফরিদা আখতার
স্টেরয়েড-হরমোন নিয়ন্ত্রণ, নিরাপদ পরিবহন ও বাজার স্থিতিশীল রাখতে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি
চলতি বছর ঈদুল আযহা উপলক্ষে দেশে কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর প্রাপ্যতা প্রায় ১ কোটি ২৪ লাখ, যা দেশের মোট চাহিদা পূরণে যথেষ্ট—ফলে বিদেশ থেকে পশু আমদানির প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
শনিবার (৪ মে) এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন,
দেশীয় খামারিদের উৎপাদিত পশু দিয়েই এবারের কোরবানির বাজার পূর্ণভাবে সরবরাহযোগ্য। আমরা প্রস্তুত, এবং বাজার স্থিতিশীল রাখতে সব ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছি।
বাজার স্থিতিশীল রাখতে সর্বোচ্চ সতর্কতা
উপদেষ্টা জানান, পশুর দাম যেন নাগালের বাইরে না যায়, সেজন্য খামারিদের সঙ্গে আলোচনায় চাঁদাবাজি বন্ধ ও অযৌক্তিক দামের বাড়তি চাপ ঠেকাতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ উৎপাদনেই এবার চাহিদা মিটে যাবে বলে খামারিরাও আশ্বস্ত করেছেন।
তিনি আরও বলেন, “পশুর বাজারে যেন কোনো অপশক্তি কৃত্রিম সংকট তৈরি না করে, সে বিষয়ে সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো সতর্ক রয়েছে।”
গবাদিপশুর পরিসংখ্যান
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা হলো:
🔸গরু-মহিষ: ৫৬ লাখ ২ হাজার ৯০৫টি
🔸ছাগল-ভেড়া: ৬৮ লাখ ৩৮ হাজার ৯২০টি
🔸অন্যান্য প্রজাতি: ৫ হাজার ৫১২টি
➡️ মোট: ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৭টি
এর মধ্যে উদ্বৃত্ত রয়েছে প্রায় ২০ লাখ ৬৮ হাজার পশু, যা চাহিদার তুলনায় দেশের প্রস্তুতিকে যথেষ্ট বলেই প্রমাণ করে।
হরমোন-স্টেরয়েড নিয়ন্ত্রণে কঠোর নজরদারি
গবাদিপশুর হৃষ্টপুষ্টকরণে অবৈজ্ঞানিক ও ক্ষতিকর উপকরণ, বিশেষত স্টেরয়েড বা হরমোনের ব্যবহার রোধে সারাদেশে মোবাইল কোর্ট ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
এ পর্যন্ত:
🔸৫৩,২৬৩টি খামার পরিদর্শন
🔸৮৩,৬৫৬ জন খামারিকে প্রশিক্ষণ
🔸২ লাখ ৭৪ হাজার লিফলেট ও পোস্টার বিতরণ
🔸৬ হাজার ৬০০টি উঠান বৈঠক
এছাড়া জেলা প্রশাসন ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের যৌথ ব্যবস্থাপনায় এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এছাড়া জেলা প্রশাসন ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের যৌথ ব্যবস্থাপনায় এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
পরিবহন ও নিরাপত্তায় সমন্বিত প্রস্তুতি
কোরবানির পশুর নির্বিঘ্ন পরিবহন নিশ্চিত করতে নিচে দেওয়া হয়েছে নির্দেশনা:
🔸বাস বা ট্রাকের লকআপে ছাগল-ভেড়া পরিবহন না করা
🔸পশু পরিবহনে নিষ্ঠুর আচরণ এড়িয়ে চলা (প্রাণিকল্যাণ আইন ২০১৯
অনুযায়ী এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ)
🔸মহাসড়ক বা সেতুতে কোরবানির পশুবাহী ট্রাক যেন যানজট সৃষ্টি না করে, সে
বিষয়ে ব্যবস্থা
🔸পশুবাহী ট্রাক ছিনতাই রোধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সক্রিয় উপস্থিতি
🔸জেলা প্রশাসন, পুলিশ, বিজিবি এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সমন্বয়ে বিশেষ
নিয়ন্ত্রণ কক্ষ (হটলাইন ১৬৩৫৮) চালু থাকবে
মাঠ পর্যায়ে সমন্বয় ও জনসচেতনতা
জেলা ও উপজেলা প্রশাসন পশুর হাট বসানোর স্থান নির্ধারণ, যানবাহন চলাচল ও হাট ব্যবস্থাপনায় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করবে। নিরাপদ, স্বাস্থ্যবান ও বৈজ্ঞানিকভাবে লালিত পশু যেন বাজারে আসে, সেটাও নিশ্চিত করা হচ্ছে।
ফরিদা আখতার বলেন,
এবার আমরা শুধু কোরবানির পশুর প্রাপ্যতা নয়, এর সঙ্গে সম্পর্কিত প্রতিটি বিষয়ে আগেভাগে প্রস্তুতি নিয়েছি। চাহিদা ও সরবরাহের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি জনস্বার্থে একটি কার্যকর ব্যবস্থাপনা চালু রাখা হবে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন দেশের অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে কোরবানির পশু চাহিদা পূরণের এ সক্ষমতা শুধু অর্থনীতির জন্য নয়, খামারিদের আত্মনির্ভরতা ও নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনার জন্যও একটি বড় অর্জন। এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হলে ভবিষ্যতেও বৈজ্ঞানিক খামার ব্যবস্থাপনা, স্বাস্থ্য সচেতনতা ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা বাড়ানোর উদ্যোগ জরুরি।
Leave a Reply