যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য সামরিক পদক্ষেপ নিয়ে উত্তেজনা বাড়লেও রাজধানী কারাকাসে হাজারো সমর্থকের সামনে আবারও শান্তির ডাক দিয়েছেন ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। তবে তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন—ভেনেজুয়েলা দাসত্বের শান্তি নয়, সার্বভৌম মর্যাদা ও স্বাধীনতার ভিত্তিতে শান্তি চায়।
সোমবার প্রেসিডেন্ট ভবনের সামনে জাতীয় পতাকা হাতে ভিড় করা মানুষের উদ্দেশে মাদুরো বলেন, “আমরা শান্তি চাই, কিন্তু দাসের শান্তি নয়। উপনিবেশ কখনোই নয়। ভেনেজুয়েলা স্বাধীন—এভাবেই থাকবে।”
এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক মহড়াকে তিনি ‘মানসিক সন্ত্রাস’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে জানান, গত ২২ সপ্তাহ ধরে ভেনেজুয়েলা নানা ধরনের চাপ ও হুমকি সহ্য করছে।
খবরে জানা যায়, মাদকবিরোধী অভিযানের নামে যুক্তরাষ্ট্র ক্যারিবীয় অঞ্চলে ১৫ হাজারেরও বেশি সৈন্য মোতায়েন করেছে এবং বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিমানবাহী রণতরীসহ শক্তিশালী সামরিক সরঞ্জাম সেখানে পাঠিয়েছে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিমাণ সামরিক প্রস্তুতি মাদকবিরোধী অভিযান হিসেবে অতিরিক্ত—যা ভেনেজুয়েলা সরকারকে উৎখাতের প্রচেষ্টা হতে পারে।
এ পর্যন্ত ২১টি তথাকথিত ‘মাদকবাহী নৌকা’ লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে, যাতে অন্তত ৮৩ জন নিহত হয়েছে বলে মার্কিন গণমাধ্যম জানিয়েছে। কারাকাসের অভিযোগ—প্রকৃত লক্ষ্য হচ্ছে দেশটির তেলসহ গুরুত্বপূর্ণ সম্পদের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া।
পরিস্থিতির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি মাদুরোর সঙ্গে এক সংক্ষিপ্ত ফোনালাপ করেছেন। বিবৃতিতে ট্রাম্প বলেন, কথোপকথনটি ‘ভালো বা খারাপ’ কোনোটিই হয়নি।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়, আলোচনায় ট্রাম্প মাদুরোকে দেশ ছাড়ার জন্য নিরাপদ পথের প্রস্তাব দেন। মাদুরো পাল্টা শর্ত দেন—নিজে ও পরিবারের সবার বিরুদ্ধে থাকা মার্কিন নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে থাকা মামলাগুলো বাতিল করতে হবে। এছাড়া ১০০ জনেরও বেশি ভেনেজুয়েলান কর্মকর্তার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞাও প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি। ট্রাম্প এসব শর্ত নাকচ করেন এবং দেশ ছাড়ার জন্য মাত্র এক সপ্তাহ সময় দেন বলেও রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
সেই সময়সীমা পেরোনোর পর ট্রাম্প ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলার আকাশসীমা মার্কিন ব্যবহারের জন্য বন্ধ।
এদিকে ভেনেজুয়েলা জুড়ে সামরিক প্রস্তুতি বাড়ানো হয়েছে। রাজধানী কারাকাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, বিমানবন্দরমুখী রুট ও উপকূলবর্তী এলাকায় প্রতিরক্ষা যন্ত্রপাতি এবং জেট উড়োজাহাজ প্রদর্শন করতে দেখা গেছে।
কোলম্বিয়া–ভেনেজুয়েলা সীমান্তের সাইমন বোলিভার সেতু এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে সম্ভাব্য যুক্তরাষ্ট্র হামলা নিয়ে তীব্র উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই বলছেন—মাদুরো সরকারের পতন চাইলেও দেশজুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ভেনেজুয়েলার সামরিক সক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় কম হওয়ায় দেশটির কর্তৃপক্ষ ‘অপ্রথাগত প্রতিরক্ষা কৌশল’—যেমন নাশকতা, অনিয়মিত হামলা, প্রভাবশালী গোষ্ঠীর মাধ্যমে প্রতিরোধ—ব্যবহারের সম্ভাবনার কথাও শোনা যাচ্ছে।
বর্তমান পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলেও মাদুরো সমর্থকদের দাবি—যে কোনো মূল্যে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবে ভেনেজুয়েলা।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.