টানা বৃষ্টিপাত আর উজানের ঢলে তিস্তা নদীতে হঠাৎ করে পানির স্তর বেড়ে গেছে। ভারতের আবহাওয়া অধিদফতর (IMD) ইতোমধ্যে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য সিকিমের জন্য রেড অ্যালার্ট জারি করেছে। আর বাংলাদেশে তিস্তার তীরবর্তী এলাকা জুড়ে বাড়ছে উদ্বেগ—বিশেষ করে লালমনিরহাট, রংপুর, গাইবান্ধা, নীলফামারী ও কুড়িগ্রাম জেলায়।
ভারতের ইকোনমিক টাইমস-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিকিমের মাঙ্গান, গিয়ালশিং ও সোরেং জেলায় ভূমিধস ও আকস্মিক বন্যার আশঙ্কায় স্থানীয় প্রশাসন প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে। গ্যাংটকের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এক জরুরি গণবিজ্ঞপ্তিতে জনগণকে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মঙ্গান জেলার জন্য জারিকৃত রেড অ্যালার্টের আওতায় পড়তে পারে ডিকচু থেকে সিংতাম পর্যন্ত তিস্তা নদীর পুরো অববাহিকা। এই এলাকা উত্তর সিকিমের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ অংশ।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার নোডাল অফিসারদের সর্বোচ্চ সতর্কতায় রাখা হয়েছে এবং মাঠ পর্যায়ে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ বজায় রাখতে বলা হয়েছে।
উজানে ভারি বৃষ্টির ফলে রংপুর বিভাগের তিস্তা তীরবর্তী অঞ্চলে পানি বাড়ছে। লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সিকিম ও উত্তরবঙ্গের বৃষ্টিপাতের প্রভাবে হঠাৎ করে তিস্তার পানি বেড়ে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার বলেন—
“এখনও পানি বিপদসীমার নিচে রয়েছে, তবে প্রতি ঘণ্টায় পানির গতি ও প্রবাহ নজরে রাখা হচ্ছে। সরাসরি বন্যার সম্ভাবনা আপাতত নেই, কিন্তু পরিস্থিতি দ্রুত বদলে যেতে পারে।”
৩০ মে দুপুর ১২টায় ডালিয়া পয়েন্টে পানির উচ্চতা রেকর্ড হয়েছে ৫১.১৫ মিটার—যা বিপদসীমার মাত্র এক মিটার নিচে। রংপুরের কাউনিয়া পয়েন্টে পানি রেকর্ড হয়েছে ২৮.১১ মিটার (বিপদসীমা ২৯.৩০ মিটার)।
রংপুর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, নিম্নচাপ ও দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর কারণে এই অঞ্চলে বৃষ্টি আরও কয়েকদিন স্থায়ী হতে পারে। ২৪ ঘণ্টায় রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় গড়ে ৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
তিস্তাপাড়ে প্রায় ৯৫টি চর রয়েছে, যেখানে হাজার হাজার মানুষ বাস করে। এসব এলাকার ঘরবাড়ি নদীর নিচু চর জমিতে অবস্থিত হওয়ায় পানি বাড়লেই দ্রুত প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
চর গোবর্ধনের বাসিন্দা ফজলার রহমান বলেন—
“বন্যা এলেই সব শেষ হয়ে যায়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ফসল, গরু-ছাগল, ঘরের জিনিস সব ভেসে যায়। এবারও অনেকেই উঠোনে পলিথিন টানিয়ে মালপত্র রাখছে।”
রংপুরের গঙ্গাচড়া, পীরগাছা ও কাউনিয়া উপজেলার তিস্তা তীরবর্তী এলাকায় নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসনের ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিভাগ পূর্ব সতর্কতার ভিত্তিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, আগামী তিন দিন তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি বাড়তে পারে এবং তিস্তার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে পূর্বাভাস রয়েছে।
Leave a Reply