ইসরায়েল ও হামাস গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপে সম্মত হয়েছে—এমন ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মধ্যস্থতাকারী কাতার জানিয়েছে, এই চুক্তির বিস্তারিত শিগগিরই প্রকাশ করা হবে।
বুধবার (৮ অক্টোবর) ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন,
“আমি গর্বের সঙ্গে জানাচ্ছি, ইসরায়েল ও হামাস উভয়েই আমাদের শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপে স্বাক্ষর করেছে। খুব শিগগিরই সব জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে এবং ইসরায়েল সম্মত সীমারেখায় সেনা প্রত্যাহার করবে।”
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন,
“গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপের সব বিধান ও বাস্তবায়ন কাঠামো নিয়ে আজ রাতে একটি চূড়ান্ত চুক্তি হয়েছে, যা যুদ্ধের সমাপ্তি, ইসরায়েলি জিম্মি ও ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি এবং মানবিক সহায়তা প্রবেশের পথ তৈরি করবে।”
ট্রাম্প আরও জানিয়েছেন, আলোচনার অগ্রগতি “খুব ভালো চলছে” এবং তিনি সম্ভবত এই সপ্তাহের শেষে মধ্যপ্রাচ্যে সফর করবেন।
মিশরের শার্ম এল-শেখে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র, কাতার, তুরস্ক ও মিশরের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনার এটি ছিল তৃতীয় দিন।
প্রথম ধাপে প্রস্তাব করা হয়েছে—গাজায় যুদ্ধবিরতি, ৪৮ জন ইসরায়েলি বন্দির মুক্তি (যাদের মধ্যে ২০ জন জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে) এবং ইসরায়েলি কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনি বন্দিদের বিনিময়।
আলোচনায় অংশ নিয়েছেন ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার, বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ, এবং ইসরায়েলের কৌশলগত বিষয়ক মন্ত্রী রন ডারমার। হামাসের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন খালিল আল-হায়া ও জাহের জাবারিন, যারা গত মাসে দোহায় ইসরায়েলি হামলা থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন।
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান জানিয়েছেন, আলোচনা “অনেক দূর এগিয়েছে” এবং ইতিবাচক ফল মিললে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হবে।
তবে আল জাজিরার বিশ্লেষক মারওয়ান বিশারা বলেছেন, এখনো গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয়ে মতপার্থক্য রয়ে গেছে—বিশেষ করে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের সময়সূচি, যুদ্ধ-পরবর্তী গাজা প্রশাসনের গঠন, এবং হামাসের ভবিষ্যৎ ভূমিকা নিয়ে।
তিনি বলেন,
“হামাস যদি বন্দিদের মুক্তি দেয়, তাহলে যুদ্ধ শেষ হবে—এটাই পরিকল্পনা। কিন্তু ইসরায়েল বলছে, হামাস নিরস্ত্র না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ শেষ নয়।”
আলোচনার মধ্যেও বুধবার ইসরায়েল গাজায় হামলা চালিয়েছে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ৮ জন নিহত ও ৬১ জন আহত হয়েছেন। গত পাঁচ দিনে ইসরায়েল ২৭১টি বিমান ও কামান হামলা চালিয়েছে, যাতে ১২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানিয়েছে, গাজার ৩৬টি হাসপাতালের মধ্যে মাত্র ১৪টি আংশিকভাবে চালু, এবং ১৭৬টি প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্রের এক-তৃতীয়াংশ কার্যকর অবস্থায় আছে। বিদ্যুৎ, পানি, ওষুধ এবং চিকিৎসা সরঞ্জামের ভয়াবহ সংকট চলছে।
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত ৬৭,০০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, এবং প্রায় দুই মিলিয়ন মানুষ বাস্তুচ্যুত বলে জানিয়েছে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ।
সূত্র: আল জাজিরা