যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ফিফার প্রথম “ফিফা পিস প্রাইজ” দেওয়ার পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বৈশ্বিক ফুটবল সংস্থা দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক নিরপেক্ষতার কথা বললেও, সংস্থার সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনোর এমন পদক্ষেপ নতুন করে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
ওয়াশিংটন ডিসি থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ফুটবলে রাজনৈতিক বার্তা প্রদর্শনের জন্য খেলোয়াড়দের নানা সময় জরিমানা বা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। কিন্তু এবার ফিফা নিজেই রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রে এসেছে।
ইনফান্তিনো ট্রাম্পকে পুরস্কার দেওয়ার পর মানবাধিকারকর্মী ও বিশ্লেষকদের তীব্র সমালোচনা মুখে পড়েছেন। বিশেষ করে ট্রাম্প প্রশাসন ক্যারিবীয় অঞ্চলে আরেকটি প্রাণঘাতী বিমান হামলা চালানোর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই এই পুরস্কার দেওয়ায় বিতর্ক আরও বেড়েছে।
জাতিসংঘের সাবেক কর্মকর্তা ও মানবাধিকারকর্মী ক্রেইগ মোকহিবার বলেন,
“ফিলিস্তিনে গণহত্যার দায়িত্বে থাকা ইসরায়েলকে ফিফা থেকে নিষিদ্ধ করা হয়নি। বরং ফিফা এখন এমন নেতাকে শান্তি পুরস্কার দিচ্ছে, যিনি হামলা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য কুখ্যাত।”
তিনি আরও বলেন, ট্রাম্পকে পুরস্কার দিয়ে মূলত তার বিতর্কিত মানবাধিকার রেকর্ড, ইসরায়েলকে দেওয়া সহায়তা এবং ক্যারিবীয় সাগরে চালানো প্রাণঘাতী হামলাসহ নানামুখী সমালোচনা আড়াল করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে ইনফান্তিনো ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যের চুক্তি, বিশেষ করে আব্রাহাম অ্যাকর্ডস-এর প্রশংসা করেন। তিনি বলেন,
“এটাই আমরা একজন নেতার কাছ থেকে আশা করি—যিনি মানুষকে গুরুত্ব দেন, নিরাপত্তার জন্য কাজ করেন এবং বিশ্বকে একত্রিত করেন।”
ট্রাম্পও পুরস্কার পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, এটি তার অন্যতম বড় সম্মান। একই সঙ্গে তিনি দাবি করেন, তার নেতৃত্বে বিশ্বে “মিলিয়ন মানুষের জীবন রক্ষা” হয়েছে।
ইনফান্তিনো ২০২3 সালেও বলেছিলেন,
“খেলা বিভাজন নয়, ঐক্যের মাধ্যম। খেলার স্বায়ত্তশাসন ও রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা রক্ষা করতে হবে।”
কিন্তু এবার একই ইনফান্তিনো একজন বিতর্কিত রাজনীতিবিদকে শান্তি পুরস্কার দেওয়ায় অনেকে প্রশ্ন তুলছেন — ফিফা কি সত্যিই নিরপেক্ষ?
একজন সাংবাদিক ব্যঙ্গ করে মন্তব্য করেন,
“ট্রাম্পকে শান্তির পুরস্কার দেওয়া ঠিক যেমন লুইস সুয়ারেজকে ‘কাউকে না কামড়ানোর’ পুরস্কার দেওয়া।”
ট্রাম্প যদিও কয়েকটি শান্তিচুক্তি করতে সাহায্য করেছেন, তবুও তার শাসনামলে—
সামরিক ব্যয় বেড়েছে,
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা হয়েছে,
ইসরায়েলকে ব্যাপক সামরিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে,
ক্যারিবীয় অঞ্চলে ২২টি বিমান হামলায় কমপক্ষে ৮৬ জন নিহত হয়েছেন,
ভেনেজুয়েলায় সামরিক প্রস্তুতি তীব্র হয়েছে,
যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীদের ওপর কঠোর অভিযান চালানো হয়েছে।
এই সব কারণে মানবাধিকার সংগঠনগুলো ট্রাম্পকে শান্তির প্রতীক হিসেবে দেখছে না।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ একটি বিবৃতিতে বলেছে,
“ট্রাম্প প্রশাসন মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য পরিচিত। তাকে ‘শান্তি ও ঐক্যে অসাধারণ অবদান’-এর স্বীকৃতি দেওয়া বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।”
সমালোচকরা বলছেন, ফিফা যখন বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে, তখন এমন পুরস্কার দেওয়া প্রশ্ন তোলে ফিফার রাজনৈতিক অবস্থান ও নিরপেক্ষতা নিয়ে।
ক্রেইগ মোকহিবারের কথায়—
“ফিফার নিয়ম কাদা মাখা মাঠে খেলা নিষেধ করে। কিন্তু রক্তমাখা মাঠে তারা খেলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইনফান্তিনো ফিফাকে বিপজ্জনক পথে নিয়ে যাচ্ছেন।”
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.