চট্টগ্রামের রপ্তানিকারকদের জন্য খুলছে নতুন দিগন্ত। আগামী জুলাই থেকে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সরাসরি গার্মেন্টস পণ্য পরিবহনের কার্গো সার্ভিস চালু হতে যাচ্ছে। বহুল প্রতীক্ষিত এই উদ্যোগের মাধ্যমে রপ্তানি বাণিজ্যে সময় ও খরচ—দুটিই কমবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রথম ধাপে একটি বিদেশি লজিস্টিক প্রতিষ্ঠান সপ্তাহে দুটি আন্তর্জাতিক কার্গো ফ্লাইট চালু করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। নির্ধারিত রুট অনুযায়ী, ইউরোপগামী কার্গো ফ্লাইট যাবে উজবেকিস্তান হয়ে এবং আরেকটি রুটে পণ্য যাবে চীনের মধ্য দিয়ে।
ভারতের হঠাৎ ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করায় বিকল্প রফতানি রুটের প্রয়োজনীয়তা তৈরি হয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরকে সক্রিয় কার্গো হাবে রূপান্তরের এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যদিও ইউরোপ এবং আমেরিকায় সরাসরি রপ্তানির জন্য জরুরি RA-3 (Regulated Agent Third Country) জোন এবং উন্নত স্ক্যানিং ও হ্যান্ডলিং সরঞ্জামের মতো অবকাঠামোগত সুবিধা এখনো সম্পূর্ণ প্রস্তুত নয়।
বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল বলেন, “ইউরোপের জন্য কার্গো ফ্লাইট পরিচালনার প্রস্তুতি চলছে, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ধাপে ধাপে গড়ে তোলা হচ্ছে।”
বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন শেখ আবদুল্লাহ আলমগীর জানান, “আর-এ-থ্রি জোন কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত ইউরোপগামী পণ্য উজবেকিস্তান ও চীন হয়ে পাঠানো হবে।”
বিশেষ করে চট্টগ্রাম ইপিজেড ও কোরিয়ান ইপিজেডের বিনিয়োগকারীরা এই রুট চালু নিয়ে আগ্রহী। চট্টগ্রামের আড়াই শতাধিক গার্মেন্টস কারখানার জন্য এই ব্যবস্থা একটি যুগান্তকারী সুযোগ তৈরি করবে বলে মনে করছেন উদ্যোক্তারা।
ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরামের চেয়ারম্যান এস এম আবু তৈয়ব বলেন, “এই ফ্লাইট চালু হলে ব্যবসায়ীদের অপারেশনাল খরচ কমবে, সময় বাঁচবে এবং ঢাকার ওপর অতিরিক্ত চাপও হ্রাস পাবে।”
যদিও গার্মেন্টস রপ্তানিতে শাহ আমানত বিমানবন্দর এখনও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে না, তবে মধ্যপ্রাচ্যমুখী যাত্রীবাহী ফ্লাইটে নিয়মিত বিপুল পরিমাণে সবজি রপ্তানি হয়। ২০২৪ সালের হিসাব অনুযায়ী, মোট ৪৩ লাখ ১২ হাজার কেজি পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যার বিপরীতে আয় হয়েছে প্রায় ৩ কোটি ১৪ লাখ টাকা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সুনির্দিষ্ট অবকাঠামো উন্নয়ন, RA-3 অনুমোদন এবং আধুনিক কার্গো হ্যান্ডলিং প্রযুক্তি সংযুক্ত করা গেলে এই বিমানবন্দর শুধু গার্মেন্টস নয়, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপমুখী সবজি ও ফলমূল রপ্তানির কেন্দ্র হিসেবেও বিকশিত হতে পারে।
উল্লেখযোগ্য যে, ২০০৫ সালে শাহ আমানত বিমানবন্দর থেকে এয়ার এমিরেটস ও ইত্তেহাদ কার্গো ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করলেও কোভিড মহামারির সময় ২০২১ সালে তা বন্ধ হয়ে যায়। এবার নতুন করে শুরু হতে যাওয়া কার্গো সার্ভিস চট্টগ্রামের রফতানি বাণিজ্যে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট মহল।
Leave a Reply