জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক গুরুত্বপূর্ণ ভাষণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ঘোষণা করেছেন—আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) দুপুর আড়াইটায় তিনি এ ঘোষণা দেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সরকারের লক্ষ্য ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করা, এবং সেই দিনেই গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। এতে নির্বাচন আরও উৎসবমুখর ও সাশ্রয়ী হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
তিনি জানান, গণভোটের মাধ্যমে ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ ২০২৫’ বিষয়ে জনগণের মতামত নেওয়া হবে। এ লক্ষ্যে উপযুক্ত সময়ে আইন প্রণয়ন করা হবে।
ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার তিনটি মূল দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছে—
১️ হত্যাকাণ্ড ও গুমের বিচার,
২️ সংস্কারের মাধ্যমে জবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গঠন,
৩️ সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর।
তিনি জানান, ‘জুলাই জাতীয় সনদ’-এর আলোকে সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। মোট ৩০টি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবে ঐকমত্য হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে—
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও নির্বাচন কমিশন গঠনের নতুন প্রক্রিয়া,
দুই কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ,
প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সীমিতকরণ,
নারীর প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি,
রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা সম্প্রসারণ,
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ইত্যাদি।
গণভোটের প্রশ্ন হবে—
“আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ ২০২৫ এবং এতে লিপিবদ্ধ সংবিধান সংস্কার প্রস্তাবগুলোতে সম্মতি দিচ্ছেন?”
এখানে ভোটাররা ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ দিয়ে মত প্রকাশ করবেন।
যদি সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট ‘হ্যাঁ’ হয়, তবে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের নিয়ে একটি সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠিত হবে, যা ১৮০ কার্যদিবসের মধ্যে সংস্কার সম্পন্ন করবে।
অর্থনীতির প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, অভ্যুত্থানের পর গভীর সংকটে থাকা অর্থনীতিকে সরকার সফলভাবে পুনরুদ্ধার করেছে।
রপ্তানি, বৈদেশিক বিনিয়োগ ও রিজার্ভে ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে।
বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (FDI) গত এক বছরে ১৯.১৩% বৃদ্ধি পেয়েছে।
আগামী সপ্তাহে লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল প্রকল্পে ৫৫০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা আসছে, যা ইউরোপের সর্বোচ্চ একক বিনিয়োগ হবে।
প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন,
“২০২৪ সালের জুলাইয়ে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যে ঐক্য গড়ে উঠেছিল, সামান্য মতভেদে সেই মর্যাদা যেন ক্ষুণ্ন না হয়। আমাদের শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সবাইকে ভিন্নমতের প্রতি সহিষ্ণু হতে হবে।”
তিনি আরও বলেন,
“এই সিদ্ধান্ত জাতির বৃহত্তর স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলো মেনে নেবে বলে আমি বিশ্বাস করি। একটি অংশগ্রহণমূলক, উৎসবমুখর নির্বাচন আমাদের নতুন বাংলাদেশের পথে এগিয়ে নেবে।”
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.