ইসরায়েলি অবরোধ ও সাহায্য সীমিতকরণের মধ্যে শীতের প্রথম ভারী বৃষ্টিতেই গাজার অস্থায়ী তাঁবু ক্যাম্পগুলো ভয়াবহভাবে প্লাবিত হয়েছে। গাজা সিটির বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা জানাচ্ছেন—তাঁবুর ভেতর পানি ঢুকে তাদের বিছানা, কাপড়, খাবারসহ সবকিছু ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। শুক্রবার আল জাজিরাকে আবদুররহমান আসালিয়াহ বলেন, “আমরা সাহায্য চাই—এমন নতুন তাঁবু চাই যা অন্তত শীতের ঠান্ডা থেকে আমাদের বাঁচাতে পারে।” প্রায় দুই ডজন মানুষ একসঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পানি সরানোর চেষ্টা করলেও কোনোভাবেই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, “শীতের বৃষ্টি আল্লাহর রহমত, কিন্তু যাদের জীবন এখন তাঁবুর ওপর নির্ভর করে, তাদের জন্য বৃষ্টি আতঙ্কের নাম। তারা শিশুদের জীবন নিয়ে ভয় পাচ্ছে, নিজেদের টিকিয়ে রাখাই কঠিন হয়ে পড়েছে।”
গাজার উত্তরাংশে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে, যেখানে গত মাসের যুদ্ধবিরতির পর বহু মানুষ ফিরে এসেছিল। কেন্দ্রীয় গাজার দেইর আল-বালাহ এলাকাতেও একই চিত্র—যেখানে গাজার সিভিল ডিফেন্স আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দ্রুত ঘর-বাড়ি, ক্যারাভান ও শীতনিরোধী তাঁবু পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছে।
যদিও অক্টোবরের ১০ তারিখের যুদ্ধবিরতির পর কিছুটা বেশি সাহায্য ঢুকেছে, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলছে—ফিলিস্তিনিরা এখনও পর্যাপ্ত খাবার, ওষুধ ও আশ্রয়সামগ্রী পাচ্ছে না। প্রায় ২ লাখ ৬০ হাজার ফিলিস্তিনি পরিবার—মোট প্রায় ১৫ লাখ মানুষ—শীতের শুরুতে ঝুঁকিতে রয়েছে।
ইউএনআরডব্লিউএ জানিয়েছে, তারা প্রায় ১৩ লাখ মানুষের জন্য আশ্রয় সামগ্রী সরবরাহ করতে পারবে; কিন্তু ইসরায়েল এখনও এসব সাহায্য প্রবেশে বাধা দিচ্ছে—যদিও যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্পষ্টভাবে বলা ছিল, মানবিক সহায়তা অবাধে পৌঁছাতে হবে।
নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের মধ্যপ্রাচ্য পরিচালক অ্যাঞ্জেলিতা ক্যারেদা সতর্ক করে বলেছেন, “পরিবারগুলোকে শীতের বৃষ্টি ও ঠান্ডা থেকে রক্ষা করার জন্য আমাদের হাতে সময় খুবই কম।”
আল জাজিরার হিন্দ খুদারি দেইর আল-বালাহ থেকে জানান, মাত্র ৩০ মিনিটের বৃষ্টিতেই পুরো ক্যাম্প ডুবে গেছে। গত দুই বছর ধরে একই পুরনো ও জীর্ণ তাঁবুতে থাকা এসব মানুষের আর যাওয়ার জায়গা নেই—তাঁবু কিংবা আশ্রয়কেন্দ্র যেটাই হোক, সবই ভিড়ে ঠাসা।
গাজার শিশুরা খালি পায়ে হাঁটছে, কারও শীতের পোশাক নেই, নেই কম্বল—আর তার মধ্যেই সাহায্য সীমিত করে দেওয়া হচ্ছে। গাজা সিটির আরেক বাস্তুচ্যুত ব্যক্তি আবু ঘাসসান বলেন, “আমাদের স্বাভাবিক জীবন বলতে কিছু নেই আর। আমি বিছানাগুলো তুলে রাখছি যাতে বাচ্চারা ভিজে না যায়, কিন্তু ওরা আগেই ভিজে গেছে। আমাদের তো ঠিকমতো থাকা যায় এমন তাঁবুও নেই।”
গাজার শীতে এমন মানবিক সংকট সামনে রেখে স্থানীয়রা শুধু একটাই আবেদন জানাচ্ছেন—“কমপক্ষে বাঁচার মতো আশ্রয় যেন পাওয়া যায়।”
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.