গাজা উপত্যকায় টানা বোমাবর্ষণে ৪৬ শিশুসহ অন্তত ১০৪ ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার পর ফের যুদ্ধবিরতি ‘মেনে চলার’ ঘোষণা দিয়েছে ইসরাইল। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) রাতে জনবসতিপূর্ণ এলাকাজুড়ে ভয়াবহ বিমান হামলার পর বুধবার (২৯ অক্টোবর) সকালে এ ঘোষণা আসে।
হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, মঙ্গলবার রাতভর ইসরাইলি যুদ্ধবিমান গাজা সিটি, বেইত লাহিয়া, বুরেইজ ও নুসেইরাত শরণার্থী শিবির এবং দক্ষিণের খান ইউনুসে হামলা চালায়। এতে ৪৬ শিশু ও ২০ নারীসহ ১০৪ জন নিহত এবং আরও ২৫০ জনের বেশি আহত হন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলার সময় আকাশজুড়ে আগুন ও ধোঁয়ার স্তম্ভ দেখা যায়, একের পর এক বিস্ফোরণে শহর কেঁপে ওঠে।
গাজা সিভিল ডিফেন্স সংস্থা জানায়, দক্ষিণ গাজার সাবরা পাড়ায় আল-বান্না পরিবারের চার সদস্য, আর বুরেইজ শরণার্থী শিবিরের এক পরিবারে পাঁচ সদস্য নিহত হয়েছেন।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী (আইডিএফ) দাবি করেছে, মার্কিন-মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের জবাবে তারা “ডজন ডজন সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তু ও যোদ্ধার” ওপর হামলা চালিয়েছে।
অন্যদিকে হামাস বলেছে, ইসরাইল “নতুন আগ্রাসনের অজুহাত” তৈরি করছে এবং যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে চললেও ইসরাইল প্রতিনিয়ত তা লঙ্ঘন করছে।
ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু অভিযোগ করেছেন, হামাস যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করেছে এবং একজন ইসরাইলি সেনাকে হত্যা করেছে। তিনি বলেন, “হামাসের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় প্রতিক্রিয়া জানানো হবে।”
এদিকে ইসরাইল দাবি করেছে, হামাস ফেরত দেওয়া সর্বশেষ মরদেহটি ওফির জারফাতি নামে এক ইসরাইলি জিম্মির, যিনি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস হামলার পর গাজায় নিখোঁজ হন। ডিএনএ পরীক্ষায় বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে বলে জানায় আইডিএফ।
সর্বশেষ হামলা নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরাইলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তিনি বলেন, একজন সেনাকে হত্যার পর ইসরাইল “প্রতিঘাত” করেছে এবং এতে যুদ্ধবিরতি হুমকির মুখে পড়বে না। বরং হামাসকে “ভালো আচরণ” করতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্র, মিশর, কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় গঠিত ২০ দফা গাজা শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপ হিসেবে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয় ১০ অক্টোবর। চুক্তি অনুযায়ী, হামাসকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ৪৮ জন জিম্মি (জীবিত ও মৃত) ফেরত দিতে হবে।
এ পর্যন্ত হামাস ২০ জন জীবিত জিম্মি মুক্তি দিয়েছে, বিনিময়ে ইসরাইল ২৫০ ফিলিস্তিনি বন্দি ও ১,৭১৮ জন আটক ব্যক্তিকে মুক্তি দিয়েছে। এছাড়া আরও ১৩ ইসরাইলি ও ২ বিদেশি জিম্মির মরদেহের বিনিময়ে ১৯৫ ফিলিস্তিনির মরদেহ ফেরত দিয়েছে ইসরাইল।
গাজায় এখনো ১৩ জন মৃত জিম্মির দেহাবশেষ রয়েছে বলে জানায় ইসরাইল, যার মধ্যে ১১ জন ইসরাইলি, একজন তানজানিয়ান ও একজন থাই নাগরিক।
হামাসের শীর্ষ নেতা খালিল আল-হাইয়া বলেন, টানা ইসরাইলি হামলায় গাজার বহু এলাকা ধ্বংস হয়ে গেছে, ফলে কিছু কবরস্থলের অবস্থান “ভুলে যাওয়া” স্বাভাবিক।
তবে ইসরাইল দাবি করছে, হামাস এখনো সব মরদেহের অবস্থান জানে এবং তা দ্রুত ফেরত দিতে হবে। ট্রাম্পও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, “অবশিষ্ট দেহাবশেষ দ্রুত হস্তান্তর না হলে অন্য অংশগ্রহণকারী দেশগুলো ব্যবস্থা নেবে।”
রাতভর হত্যাযজ্ঞের পর বুধবার সকালে ইসরাইল ঘোষণা দেয়, তারা “ফের যুদ্ধবিরতি মেনে চলা শুরু করেছে।”
সূত্র: আল জাজিরা