গাজায় চলমান মানবিক সংকটের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ঘোষণা দিয়েছেন—জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (UNRWA) কোনোভাবেই গাজায় ত্রাণ বিতরণে ভূমিকা রাখবে না। একইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে হামাসও গাজা প্রশাসনে কোনো ভূমিকা পাবে না।
শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) ইসরায়েল সফরকালে এক সংবাদ সম্মেলনে রুবিও বলেন,
“ইউএনআরডব্লিউএ কার্যত হামাসের একটি শাখায় পরিণত হয়েছে।”
তবে এই দাবি ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (ICJ) এবং জাতিসংঘ উভয়েই ভিত্তিহীন ও অগ্রহণযোগ্য বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। জাতিসংঘের উপ–মুখপাত্র ফারহান হক বলেন,
“ইউএনআরডব্লিউএ গাজায় মানবিক সহায়তার মেরুদণ্ড। এর সঙ্গে হামাসের কোনো সম্পর্ক নেই।”
ইউএনআরডব্লিউএ নিজেও জানায়, গাজায় তাদের উপস্থিতি মানবিক সংকট মোকাবিলায় অপরিহার্য এবং “কোনো সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ’র ভূমিকা পূরণ করতে পারবে না।”
এদিকে, গাজায় ইসরায়েলি অভিযানে দুই বছরে ৬৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। সাম্প্রতিক মার্কিন-মধ্যস্থ যুদ্ধবিরতির পরও ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে এবং রাফাহ সীমান্ত বন্ধ রেখেছে—যার ফলে নির্ধারিত পরিমাণ ত্রাণ ঢুকছে না।
রুবিও জানান, গাজায় যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণে একটি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বাহিনী গঠনের উদ্যোগ চলছে, যেখানে ইসরায়েল অংশগ্রহণকারী দেশগুলো বাছাইয়ে ভেটো ক্ষমতা রাখবে। তবে তুরস্কের অংশগ্রহণে ইসরায়েলের আপত্তি রয়েছে।
অন্যদিকে, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাত গাজায় সহায়তা পাঠাতে প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান বলেছেন,
“আমরা গাজাকে যেকোনোভাবে সহায়তা দিতে প্রস্তুত।”
এদিকে, কায়রো বৈঠকে প্রধান ফিলিস্তিনি দলগুলো সম্মত হয়েছে—একটি স্বাধীন টেকনোক্র্যাট কমিটি গাজা পরিচালনা করবে, যা আরব দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতায় কাজ করবে।
গাজা শহর থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদনে জানা গেছে, বহু মানুষ ধ্বংসস্তূপে ঘরে ফিরছেন, কিন্তু সেখানে “কিছুই অবশিষ্ট নেই।” পানির, খাদ্যের ও ওষুধের তীব্র সংকটে দিন কাটছে ২১ লাখ মানুষের।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও গাজায় প্রবেশ করা সহায়তার পরিমাণ অপর্যাপ্ত এবং ক্ষুধার মাত্রা কমেনি।
সংস্থাটির প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস বলেন,
“যা গাজায় প্রবেশ করছে তা মোটেও যথেষ্ট নয়। পরিস্থিতি এখনো ভয়াবহ।”