গাজার মানবিক সংকট নতুন এক ভয়াবহ মাত্রায় পৌঁছেছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, ফিলিস্তিনের ২৩ লাখ জনগণের কেউই এখন খাদ্য নিরাপত্তার বাইরে নেই—প্রত্যেকে দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি।
জাতিসংঘের মানবিক সমন্বয় দপ্তরের (OCHA) মুখপাত্র জেন্স লারকে শুক্রবার বলেন, “গাজার ১০০ শতাংশ জনগণ এখন বিপর্যয়কর ক্ষুধার মধ্যে রয়েছে।” যে পরিমাণ ত্রাণ ঢুকছে তা একেবারে সীমিত, “ড্রিপ ফিড” বলে উল্লেখ করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, এ রকম বাধাগ্রস্ত ত্রাণ কার্যক্রম সাম্প্রতিক ইতিহাসে বিরল।
বর্তমানে যে সামান্য ত্রাণ ঢুকছে তা পরিচালনা করছে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত বিতর্কিত সংগঠন Gaza Humanitarian Foundation (GHF)। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এটি ইসরায়েলের যুদ্ধ কৌশলের অংশ হিসেবেই কাজ করছে।
আল জাজিরা জানায়, শুক্রবার গাজায় খাদ্য সহায়তা সংগ্রহ করতে গিয়ে ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। এই বিতরণ কেন্দ্র গাজার ভিতরের নেটজারিম করিডরের পাশে অবস্থিত, যেখানে সবসময় সেনা পাহারা থাকে।
অন্য এক সূত্র জানায়, খাদ্যের জন্য লাইনে দাঁড়ানো অনেক মানুষ হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে গেছেন। পরিবারগুলো বলছে, অনেকেই খোঁজ না রেখেই নিখোঁজ হয়ে গেছে। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, গেইটের মতো কাঁটাতারের লাইনে দাঁড় করানো হচ্ছে মানুষকে, সামনেই ইসরায়েলি ট্যাংক অবস্থান করছে।
ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস বলছে, ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে খাদ্য বিতরণ এমনভাবে পরিচালনা করছে যাতে গাজাবাসীদের জোর করে স্থানান্তর করানো যায়। শিশু, বয়স্ক এবং প্রতিবন্ধীদের কাছে খাদ্য পৌঁছানো একরকম অসম্ভব করে তোলা হচ্ছে।
খাদ্য অধিকারবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি মাইকেল ফাখরি বলেন, “এখন বলা নিরাপদ যে গাজায় দুর্ভিক্ষ চলছে।” তিনি বলেন, “ইসরায়েল খাদ্যকে ব্যবহার করছে ফাঁদ হিসেবে—মানুষকে উত্তরের অঞ্চল থেকে সরিয়ে নিয়ন্ত্রণযোগ্য দক্ষিণে নিতে।”
এদিকে, গাজায় শুক্রবারই ৩০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। দেইর আল-বালাহ, জাবালিয়া এবং খান ইউনিসে চালানো হামলায় এসব প্রাণহানি ঘটে। গত দুই সপ্তাহে ইসরায়েলের স্থানত্যাগের নির্দেশে প্রায় ২ লাখ মানুষ নতুন করে বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
মানবিক সংকটে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ শুক্রবার সতর্ক করে বলেন, ইসরায়েল সাড়া না দিলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে প্যারিস। “আমরা চুপচাপ বসে থাকতে পারি না,” বলেন ম্যাক্রোঁ। “পরিস্থিতি অনুযায়ী যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে আমাদের অবস্থান আরও কঠোর হবে।”
তবে যুদ্ধবিরতি আলোচনায় এখনও অগ্রগতি নেই। যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত একটি প্রস্তাব পর্যালোচনা করছে হামাস, তবে এতে ইসরায়েলের যুদ্ধ থামানো, সেনা প্রত্যাহার বা অবাধ ত্রাণ প্রবেশের প্রতিশ্রুতি নেই বলেই জানিয়েছে সংগঠনটি।
Leave a Reply