গাজা সিটির সাধারণ মানুষকে “এখনই শহর ছেড়ে যাও” বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। একই সময়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধান ভলকার টার্ক ইসরায়েলকে অভিযুক্ত করেছেন “গণহত্যা ও ধারাবাহিক যুদ্ধাপরাধের” জন্য।
সোমবার এক বিবৃতিতে ভলকার টার্ক বলেন, গাজায় যে হত্যাযজ্ঞ চলছে তা বিশ্বের বিবেককে কাঁপিয়ে দিচ্ছে। তিনি সতর্ক করে দেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে (ICJ) জবাবদিহির যথেষ্ট কারণ রয়েছে। আদালত ইতিমধ্যে জানুয়ারিতে রায় দিয়েছিল যে, তেলআবিবকে গণহত্যা প্রতিরোধে পদক্ষেপ নিতে হবে।
গাজা সিটিতে ইসরায়েলি হামলায় গত দুই দিনে ৫০টিরও বেশি ভবন সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও শতাধিক ভবন। ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল অভিযোগ করেন, ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে আবাসিক ভবন ও বাস্তুচ্যুত মানুষের তাঁবু লক্ষ্যবস্তু করছে। মাত্র ২৪ ঘণ্টায় ২০০টিরও বেশি তাঁবু ধ্বংস হয়েছে বলে জানান তিনি।
সোমবার একদিনেই অন্তত ৫২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৩২ জন গাজা সিটির বাসিন্দা। এছাড়া ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে আরও ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। নিহতদের মধ্যে ছিলেন ফিলিস্তিনি সাংবাদিক ওসামা বালৌশা। এ পর্যন্ত প্রায় ২৫০ জন সাংবাদিক গাজায় নিহত হয়েছেন, যাদের সবাই ফিলিস্তিনি।
ইসরায়েল নতুন মানচিত্র প্রকাশ করে গাজা সিটির বাসিন্দাদের জানিয়ে দিয়েছে যে নির্দিষ্ট এলাকা খালি না করলে প্রাণঘাতী হামলা চালানো হবে। তবে নিরাপদ এলাকা হিসেবে ঘোষিত দক্ষিণ গাজার আল-মাওয়াসিও বারবার ইসরায়েলি হামলার শিকার হয়েছে। বর্তমানে ওই অঞ্চলে প্রায় আট লাখেরও বেশি মানুষ অস্থায়ী আশ্রয়ে রয়েছে, যা এক তৃতীয়াংশের বেশি জনসংখ্যা।
এদিকে, স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ ঘোষণা করেছেন। তিনি জানান, ইসরায়েলে অস্ত্র বহনকারী জাহাজ বা বিমান স্পেনের বন্দর ও আকাশপথ ব্যবহার করতে পারবে না। একইসাথে অবৈধ দখলকৃত বসতিতে উৎপাদিত পণ্য আমদানিও নিষিদ্ধ করা হবে।
অন্যদিকে, হামাস জানিয়েছে তারা যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। তবে যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাবিত পরিকল্পনাকে “ফাঁদ” বলে উল্লেখ করেছে হামাস, কারণ এতে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার নির্ভর করছে নতুন প্রশাসনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তার ওপর।
গাজার পাশাপাশি দখলকৃত পশ্চিম তীরেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। সোমবার এক হামলায় ছয়জন নিহত ও ডজনখানেক আহত হয়। পরে ইসরায়েলি সেনারা একাধিক ফিলিস্তিনি গ্রামে অভিযান চালায়। জেনিনে ইসরায়েলি অভিযানে ১৪ বছর বয়সী দুই কিশোর নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
ফিলিস্তিনি রাজনীতিবিদ মুস্তাফা বারঘুতি বলেন, পশ্চিম তীরে এমন অভিযান কোনো নির্দিষ্ট ঘটনার প্রতিক্রিয়া নয়; বরং এগুলো পরিকল্পিত জাতিগত নিপীড়ন ও দখলদারিত্ব বাড়ানোর কৌশল।
Leave a Reply