গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর নতুন হামলায় কমপক্ষে ২৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আহত হয়েছেন আরও কমপক্ষে ৭৭ জন। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ঘোষিত যুদ্ধবিরতি চলমান থাকা অবস্থায় এই হামলা এলাকাজুড়ে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
বুধবার (২০ নভেম্বর) ইসরায়েলের চালানো কয়েক দফা হামলায় গাজার দক্ষিণাঞ্চলের আল-মাওয়াসি এলাকা, গাজা সিটির শুজাইয়া অঞ্চলের একটি ব্যস্ত জংশন এবং জেইতুন এলাকায় একটি ভবন লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। আল জাজিরার স্থানীয় সাংবাদিক হানি মাহমুদ জানান, জেইতুনে ধ্বংসস্তূপের ভেতর একটি পুরো পরিবার—একজন বাবা, মা ও তাদের তিন সন্তান—নিহত হন।
তিনি বলেন,
“যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও হামলা কখনই থামেনি। গাজার মানুষ প্রতিদিন ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে।”
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, হামাসের সদস্যদের ‘গোপন হামলা’—যেখানে তাদের বাহিনী নাকি গুলি খেয়েছিল—তার জবাব হিসেবেই তারা এই আক্রমণ চালিয়েছে। তবে হামাস এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে এটিকে “ইসরায়েলের অপরাধ ঢাকতে ব্যবহৃত অজুহাত” বলে উল্লেখ করেছে।
অধিকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লাহ থেকে আল জাজিরার নূর ওদেহ বলেন,
“ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি মানা হচ্ছে কিনা নিজেরাই বিচার করে এবং নিজেদের সিদ্ধান্তেই হামলা চালায়—অর্থাৎ তারা বিচারক, জুরি ও কার্যকরকারী তিন ভূমিকাতেই কাজ করছে।”
এরই মধ্যে লেবাননের বিভিন্ন জায়গায়ও ইসরায়েলের টার্গেটেড হামলা তীব্র হয়েছে, বিশেষ করে দক্ষিণ লেবাননের একটি ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবিরে হামলায় অন্তত ১২ জন নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা বাড়ছে।
এ সব ঘটনার মাঝেই জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ (UNSC) সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র–সমর্থিত ‘আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী’ মোতায়েনের প্রস্তাবসহ গাজা শান্তি পরিকল্পনা পাস করেছে। প্রস্তাবটি গাজা শাসনে নতুন কাঠামো প্রতিষ্ঠার কথা বললেও হামাস ও অন্যান্য ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী একে জাতীয় ইচ্ছার বিরুদ্ধে আখ্যা দিয়ে প্রত্যাখ্যান করেছে।
মানবাধিকার সংস্থা আল-হাক সতর্ক করে বলেছে—এই পরিকল্পনা ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে ক্ষুণ্ন করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোয়িনসি ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ গবেষক খালেদ এলগিন্ডি বলেন,
“ইসরায়েলের এই হামলা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য বড় পরীক্ষা। তারা কি এই যুদ্ধবিরতি রক্ষা করবে, নাকি নীরব থাকবে?”
তার মতে, যুক্তরাষ্ট্র কার্যকর ভূমিকা না রাখলে যুদ্ধবিরতির নামে যুদ্ধই চলতে থাকবে।
আল জাজিরার বিশ্লেষণ বলছে, যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর থেকে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত ইসরায়েল কমপক্ষে ৩৯৩ বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.