গাজা সিটিতে ইসরায়েলের টানা বিমান ও স্থল হামলায় একদিনে অন্তত ৯১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে রয়েছে নারী-শিশুসহ অসংখ্য বেসামরিক। গাজার চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, কেবল শনিবারেই রাজধানী গাজা সিটিতে নিহত হয়েছেন অন্তত ৭৬ জন।
ডাক্তারের পরিবারের ওপর হামলাশনিবার ভোরে ইসরায়েলি বাহিনী গাজা সিটির আল-শিফা হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ আবু সালমিয়ার পারিবারিক বাসভবনে হামলা চালায়। এতে নিহত হন তার ভাই, ভাবি এবং তাদের সন্তানরা।
আবু সালমিয়া বলেন, “নিজ ভাই ও তার স্ত্রীর মরদেহ হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগে গ্রহণ করতে হয়েছে—এ এক অসহনীয় বাস্তবতা।”
হামাস এই হত্যাযজ্ঞকে “ডাক্তারদের ভয় দেখানোর সন্ত্রাসী বার্তা” বলে নিন্দা জানিয়েছে। সংগঠনটির দাবি, অক্টোবর ২০২৩ থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলি বাহিনী প্রায় ১,৭০০ স্বাস্থ্যকর্মীকে হত্যা করেছে এবং ৪০০ জনকে আটক করেছে।
পালাতে গিয়ে মৃত্যু শনিবার গাজা সিটি থেকে পালানোর সময় একটি ট্রাকে থাকা অন্তত চারজনকে হত্যা করে ইসরায়েলি বাহিনী। নাসর এলাকায় চালানো ওই হামলায় রাস্তায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে রক্তাক্ত মরদেহ।
আল জাজিরার প্রতিবেদক হিন্দ খৌদারি জানিয়েছেন, নিরবচ্ছিন্ন বিমান হামলা, কামান গোলা ও কোয়াডকপ্টার হামলা থেকে বাঁচতে হাজারো মানুষ শহর ছেড়ে পালাচ্ছিলেন। কিন্তু উদ্ধারকর্মীরাও নিরাপদে পৌঁছাতে পারছিলেন না।
গাজার ধ্বংস ও বাস্তুচ্যুত মানুষ ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, আগস্ট থেকে শুরু হওয়া এ অভিযানে ইতোমধ্যে ৪ লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ গাজা সিটি ছেড়ে পালিয়েছে।
ইসরায়েলি সেনারা গত দুই সপ্তাহে প্রায় ২০টি বহুতল ভবন ধ্বংস করেছে বলে দাবি করছে। যারা পালিয়েছে, তাদের অধিকাংশই পানির অভাব, বিদ্যুৎবিহীন ও অবকাঠামোহীন এলাকায় তাঁবু ফেলতে বাধ্য হচ্ছে।
মানবিক সংকট ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স (MSF) জানিয়েছে, দক্ষিণাঞ্চলীয় আল-মাওয়াসিতে অবস্থা ভয়াবহ। খাবার, পানি ও স্বাস্থ্যসেবার অভাবে মহামারি পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
ইসরায়েলে বিক্ষোভ অন্যদিকে, ইসরায়েলের ভেতরেই হাজারো মানুষ তেল আবিবে বিক্ষোভ করেছে। তারা যুদ্ধ বন্ধের দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কাছে আহ্বান জানায়—হামাসের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছে বন্দিদের মুক্ত করতে হবে।
প্রতিবাদকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছেও চাপ সৃষ্টির আহ্বান জানান। তবে ডানপন্থী জোট সরকারের নেতারা এসব বিক্ষোভকে “রাষ্ট্রবিরোধী” বলে আখ্যা দিয়েছেন।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, গাজার চলমান অভিযানের কারণে অবশিষ্ট বন্দিদের জীবন আরও হুমকির মুখে পড়ছে।
সূত্র আল জাজিরা
Leave a Reply