গাজার সবচেয়ে বড় নগরকেন্দ্র গাজা সিটিকে দখলে নিতে অবকাঠামো ধ্বংসের ধারাবাহিক অভিযান চালাচ্ছে ইসরাইলি সেনারা। শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) নতুনভাবে একটি ১৫ তলা বহুতল ভবন সাউসি টাওয়ারে বোমা বর্ষণ করা হয়, যার বিপরীতে ছিল জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর একটি ভবন। এর আগে ভবনের বাসিন্দাদের মাত্র আধা থেকে এক ঘণ্টার মধ্যে সরতে বলা হয়েছিল।
আল জাজিরার গাজা সিটির প্রতিবেদক হানি মাহমুদ বলেন, “এমন স্বল্প সময়ে পরিবারগুলো পালাতে গিয়ে ভয়ের মধ্যে পড়ছে। তাদের কাছে এটা মৃত্যুর হুমকির সমান।”
ইসরাইল দাবি করেছে, হামলা করা ভবনগুলো হামাস গোয়েন্দা তৎপরতা ও টানেল খননের কাজে ব্যবহার করত। তবে গাজার গভর্নমেন্ট মিডিয়া অফিস এসব দাবি প্রত্যাখ্যান করে জানিয়েছে, “এগুলো নিছক মিথ্যা প্রচারণা, যা দিয়ে বেসামরিক মানুষ ও অবকাঠামো ধ্বংসকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।”
জাতিসংঘ শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) মুখপাত্র টেস ইনগ্রাম বলেছেন, গাজায় প্রায় এক মিলিয়ন মানুষ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঝুঁকিতে, যার অর্ধেকই শিশু। “গাজার প্রতিটি দ্বিতীয় মানুষই শিশু। তাদের জন্য জীবন এখন প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে।”
সেভ দ্য চিলড্রেন জানিয়েছে, ইসরাইলি হামলায় গড়ে প্রতি ঘণ্টায় অন্তত একজন ফিলিস্তিনি শিশু নিহত হচ্ছে। গত ২৩ মাসে অন্তত ২০ হাজার শিশু প্রাণ হারিয়েছে।
শনিবার সকাল থেকে এখন পর্যন্ত ইসরাইলি হামলায় অন্তত ৬৭ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ৪৫ জনই গাজা সিটিতে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরাইলের হামলায় ৬৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ৬২ হাজারের বেশি আহত হয়েছেন।
দক্ষিণ গাজার খান ইউনুসের নাসের হাসপাতালে জানানো হয়, আল-মাওয়াসি এলাকায় বাস্তুচ্যুতদের একটি তাঁবুতে ইসরাইলি বিমান হামলায় অন্তত দুইজন নিহত হয়েছেন। অথচ এই এলাকা শুরুতে “মানবিক অঞ্চল” হিসেবে ঘোষণা করেছিল ইসরাইল।
গাজার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সতর্ক করে বলেছে, এসব ঘোষিত নিরাপদ অঞ্চল আসলে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির অংশ। আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাস্তুচ্যুত মানুষরা এখন আর কোথাও নিজেদের নিরাপদ মনে করছেন না—থাকলে মৃত্যুর আশঙ্কা, আর সরলেও হামলার ভয়।
গাজা সিটির জেইতুন এলাকায় ফেরত যাওয়া বাসিন্দারা দেখেছেন, তাদের সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেছে। স্থানীয় বাসিন্দা আকিল কিশকো বলেন,
“৫০ বছরে যা গড়েছি, তা পাঁচ দিনে ধ্বংস হয়েছে। আমরা কেবল ধ্বংসস্তূপ নয়, আমাদের প্রিয়জনের মৃতদেহের ওপর দিয়ে হাঁটছি।”
অন্য এক বাসিন্দা আহমেদ রিহেম বলেন, “এ যেন গোটা জেইতুন মহল্লায় পারমাণবিক বোমা ফেলা হয়েছে।”
Leave a Reply