ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় গাজায় আরও সাত ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ছিল দুই শিশু। একই সঙ্গে ইসরায়েল ঘোষণা দিয়েছে, রাফাহ ক্রসিং শিগগিরই খোলা হবে—তবে শুধু গাজাবাসীর বের হওয়ার জন্য। ফলে স্থায়ী বাস্তুচ্যুতির আশঙ্কা আরও বেড়েছে।
বুধবারের এই হামলা যুক্তরাষ্ট্র–মধ্যস্থ যুদ্ধবিরতির আরেকটি লঙ্ঘন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সরকারি তথ্য কার্যালয়।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, রাফাহ সীমান্তের কাছে হামাস যোদ্ধাদের এক হামলায় তাদের চার সেনা আহত হয়। এরপরই জাইটুন এলাকায় দুজনকে গুলি করে হত্যা করে ইসরায়েলি বাহিনী। দক্ষিণাঞ্চলের আল-মাওয়াসি ক্যাম্পে হামলায় নিহত হয় আরও পাঁচজন।
হামলায় সৃষ্ট আগুনে একাধিক তাবু পুড়ে যায়।
গাজা সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল বলেন, “দুই শিশুসহ পাঁচজন নিহত এবং অনেক আহত হয়েছে।” নিহত শিশুদের বয়স ছিল আট ও দশ বছর। আহত হয়েছে আরও ৩২ জন।
আল-মাওয়াসি হামলাকে “যুদ্ধাপরাধ” বলে নিন্দা জানিয়েছে হামাস। তাদের দাবি, যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল কমপক্ষে ৫৯১ বার লঙ্ঘন করেছে। এতে ৩৬০ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৯২২ জন আহত হয়েছে।
এদিকে, রেড ক্রসের মাধ্যমে ইসরায়েলকে ফেরত দেওয়া হয়েছে গাজায় থাকা দুই বন্দির একজনের ‘সম্ভাব্য’ দেহাবশেষ। আগের দিন যে আংশিক দেহাবশেষ ইসরায়েল পেয়েছিল, তা ওই দুই বন্দির কারও নয় বলে জানিয়েছিল ইসরায়েল।
এ পর্যন্ত যুদ্ধবিরতির অধীনে হামাস ২০ জীবিত বন্দি ও ২৬ জনের দেহ ইসরায়েলকে দিয়েছে, বিনিময়ে মুক্ত হয়েছে প্রায় ২ হাজার ফিলিস্তিনি আটক ও বন্দি।
ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনার প্রথম ধাপে রাফাহ ক্রসিং দুই দিকেই খোলার কথা থাকলেও ইসরায়েলের সমন্বয় সংস্থা COGAT বলেছে, রাফাহ শুধু গাজাবাসীর বের হওয়ার জন্য খোলা হবে এবং এতে নিরাপত্তা অনুমতি লাগবে।
গাজা থেকে আল জাজিরার হানি মাহমুদ বলেন—
“এটি ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন চলাচল নিশ্চিত করার উদ্যোগ নয়। বরং তাদের ফিরতে না দেওয়ার একটি পথ তৈরি করছে।”
ইসরায়েলের এই অবস্থান গাজাকে জনশূন্য করার প্রচেষ্টা হিসেবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে।
মিসর জানিয়েছে—
তারা একদিক দিয়ে ক্রসিং খোলা মানবে না
দুই দিকেই চলাচল নিশ্চিত না হলে রাফাহ খোলা হবে না
বিষয়টি নিয়ে ইসরায়েলের সাথে কোনো সমন্বয় নেই
মিসরের সাবেক উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী হুসেইন হারিদি বলেন:
“১৯৪৮ সাল থেকে ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির শর্ত মানতে নানা কৌশল করে। প্রয়োজনে আমরা বিষয়টি নিরাপত্তা পরিষদে তুলব।”
জাতিসংঘ বলেছে—
রাফাহ ক্রসিং পুরোপুরি খুলতে হবে
মানবিক সরবরাহ, মানুষ এবং সহায়ক কর্মীদের চলাচল নিশ্চিত করতে হবে
যারা গাজা ছাড়তে চান, তাদের “স্বেচ্ছায় ও চাপমুক্তভাবে” যাওয়ার সুযোগ দিতে হবে
যারা আগে গাজা ছেড়েছেন, চাইলে যেন ফিরে আসতে পারেন
ট্রাম্প দাবি করেছেন, “মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি চলছে” এবং তার শান্তি পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপ “খুব দ্রুত” শুরু হবে।
দ্বিতীয় ধাপে রয়েছে—
আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বাহিনী গঠন
প্রযুক্তিনির্ভর ফিলিস্তিনি সরকার
হামাসকে নিরস্ত্র করা
হামাস স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, ইসরায়েলি দখল চলা পর্যন্ত তারা অস্ত্র রাখবে না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে—
যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ৮,০০০-এর বেশি রোগী গাজা ছাড়তে পেরেছে
এখনো ১৬,৫০০-এর বেশি অসুস্থ ও আহত মানুষ বাইরে চিকিৎসার অপেক্ষায়
এমএসএফ জানিয়েছে—
চিকিৎসা সরিয়ে নেওয়ার প্রয়োজন “অত্যন্ত বেশি”
অনেক দেশই অনুমোদন বা বাজেট বরাদ্দ দিতে দেরি করছে
ইতালি ২০০-এর বেশি রোগী নিয়েছে, ফ্রান্স ২৭ জন, জার্মানি এখনো কাউকে নেয়নি।
গাজায় নিহত: ৭০,১১৭ বেশি,আহত: ১৭০,৯৯৯ ,ইসরায়েলে নিহত: ১,১৩৯, বন্দি: প্রায় ২০০
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.