গাজায় আবারও ইসরায়েলি বাহিনীর তীব্র হামলা। ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকা সত্ত্বেও শনিবার বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলি বিমান ও ড্রোন হামলায় কমপক্ষে ২৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ৮৭ জন। নিহতদের মধ্যে শিশু ও নারীও রয়েছে।
প্রথম হামলাটি হয় গাজা সিটির উত্তরে একটি গাড়িতে। এরপর পরপর দেইর আল-বালাহ এবং নুসেইরাত শরণার্থী ক্যাম্পেও বিস্ফোরণ ঘটে। আল-শিফা হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রামি মুহান্না জানান, রিমাল এলাকায় এক ড্রোন হামলায় অন্তত ১১ জন নিহত ও ২০ জন আহত হন।
দেইর আল-বালাহতে একটি বাসা লক্ষ্য করে চালানো হামলায় তিনজন, যার মধ্যে একজন নারী ছিলেন, ঘটনাস্থলেই নিহত হন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিস্ফোরণের ধাক্কায় পুরো এলাকা ধোঁয়ায় ঢেকে যায়। বাড়ির উপরের তলা ধসে পড়ে।
নুসেইরাতে একটি আবাসিক ভবনেও হামলা চালানো হয়। প্রত্যক্ষদর্শী আনাস আল-সলুল জানান, তার প্রতিবেশীর বাড়িতে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত করলে পুরো রাস্তা ধুলাবালিতে ভরে যায় এবং আহতদের হাসপাতালে নিতে ছুটে যান বাসিন্দারা।
গাজা সরকারের মিডিয়া অফিস বলছে, ১০ অক্টোবর থেকে যুক্তরাষ্ট্র-সক্ষম যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর এ পর্যন্ত ইসরায়েল অন্তত ৪৯৭ বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে। এসব হামলায় মোট ৩৪২ বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে শিশু, নারী ও বৃদ্ধ বেশি।
এক বিবৃতিতে অফিস বলেছে—
“ইসরায়েলি বাহিনীর এসব পদ্ধতিগত হামলা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সরাসরি লঙ্ঘন। শুধু শনিবারেই ২৪ জন নিহত ও ৮৭ জন আহত হয়েছেন।”
ইসরায়েল দাবি করেছে, তাদের সেনাদের উপর হামাস যোদ্ধাদের আক্রমণের জবাবেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। তবে এ বিষয়ে হামাস এখনও কোনো মন্তব্য করেনি।
অন্যদিকে হামাস অভিযোগ করছে, ইসরায়েল “মিথ্যা অজুহাত” দেখিয়ে যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করছে এবং পশ্চিম সীমান্তরেখা অতিক্রম করে নতুন এলাকা দখল করছে। তারা যুক্তরাষ্ট্র, মিশর ও কাতারকে হস্তক্ষেপ করার আহ্বান জানিয়েছে।
হামাস রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য ইজ্জাত আল-রিশেক বলেন—
“ইসরায়েল অবিরাম আগ্রাসন চালাচ্ছে এবং যুদ্ধবিরতি ব্যাহত করতে নানা অজুহাত তৈরি করছে।”
গাজা হামলার পাশাপাশি পশ্চিম তীরেও বাড়ছে সামরিক ও বসতি স্থাপনকারীদের আক্রমণ। মসাফির ইয়াত্তা এলাকায় ফিলিস্তিনি কৃষকদের মারধর এবং দোরা শহরে অভিযান চালিয়ে দুই ফিলিস্তিনিকে আহত করার অভিযোগ উঠেছে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, অক্টোবর মাসে পশ্চিম তীরে ২৬০টি বসতি স্থাপনকারী হামলার ঘটনা ঘটেছে, যা ২০০৬ সালের পর সর্বোচ্চ। বাড়িঘর ধ্বংস, সম্পত্তি দখল, গ্রেফতার ও বাধা-নিষেধ—সব মিলিয়ে সাধারণ ফিলিস্তিনি জনগণের জীবন প্রতিনিয়ত ঝুঁকির মুখে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারের দপ্তর বলছে—
“দখলকৃত এলাকায় জনগণকে জোরপূর্বক সরিয়ে নেওয়া আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধের শামিল।”