সৌদি আরবে আল-উলার নিকটবর্তী হেগরা বা আল-হিজর, যা ইসলামে মাদায়েন সালেহ নামে পরিচিত, একটি প্রাচীন সভ্যতার ধ্বংসপ্রাপ্ত স্থান। এটি নবী সালেহ (আ.)–এর জাতি সামুদের আবাসস্থল ছিল। সামুদরা পাহাড় খোদাই করে ঘরবাড়ি ও প্রাসাদ নির্মাণে দক্ষ ছিলেন। তাদের জীবন অত্যন্ত সমৃদ্ধ ছিল, কিন্তু ধন–সম্পদের অপব্যবহার, অহংকার ও গরিবদের অত্যাচারের কারণে তারা আল্লাহর শাস্তির মুখোমুখি হয়।
পবিত্র কুরআনে, আল্লাহ বলেন,
স্মরণ করো, তিনি তোমাদেরকে আদ জাতির পর উত্তরসূরি করেছেন এবং তোমাদেরকে ভূপৃষ্ঠে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তোমরা সমতলভূমিতে প্রাসাদ নির্মাণ কর এবং পাহাড় কেটে ঘরবাড়ি তৈরি করো। সুতরাং আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ করো এবং পৃথিবীতে অপকর্ম ছড়িয়ে বেড়িও না। (সুরা আল-আরাফ, আয়াত ৭৪)
নবী সালেহ (আ.) তাদেরকে একমাত্র আল্লাহর ইবাদতের দিকে আহ্বান জানালেও, অধিকাংশ মানুষ তার দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করে। তারা হেদায়েত গ্রহণ না করে একটি চ্যালেঞ্জ তোলে—পাথর থেকে একটি গর্ভবতী উটনী বের করার দাবি। আল্লাহর কুদরতে পাহাড় ফেটে উটনীটি বের হয়। কিন্তু সামুদের মধ্যে কিছু লোক তা হত্যা করে। এর ফলে আল্লাহ তাদের ওপর প্রচণ্ড শাস্তি পাঠান—ভূমিকম্প ও গর্জন তাদের ধ্বংস করে।
হাদিসে বর্ণিত,
নবীজী (সা.) সাহাবাদের সতর্ক করেছেন, “তোমরা ক্রন্দনরত অবস্থা ব্যতিরেকে এই স্থানে প্রবেশ করবে না। যদি তোমাদের ক্রন্দন না আসে, তবে প্রবেশ করিও না। হয়ত তাদের ওপর যা ঘটেছিল তা তোমাদের ওপরও ঘটতে পারে।” (বুখারি ৪৭০২)
এর অর্থ, নবীজির নির্দেশ অনুযায়ী সামুদের ধ্বংসপ্রাপ্ত এলাকা মানুষের জন্য একটি শিক্ষা ও সতর্কবার্তা। আল্লাহর নাফরমানির ভয় ও শাস্তির স্মরণে, নবীজী (সা.) মানুষকে ক্রন্দন ও ভীতি ছাড়া এই স্থানে প্রবেশ না করতে বলেছিলেন।
বর্তমানে সৌদি আরব এই ঐতিহাসিক স্থানকে বৈশ্বিক পর্যটন গন্তব্যে রূপান্তর করেছে। তবে ইসলামিক বিধান অনুসারে, এটি মূলত একটি জীবন্ত যাদুঘর এবং শিক্ষণীয় স্থান হিসেবে সংরক্ষিত।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.