সুদ (রিবা) ইসলামে শুধু নিষিদ্ধই নয়, বরং এটি অন্যতম ভয়াবহ গুনাহ হিসেবে বিবেচিত। কোরআন ও হাদিসে সুদখোর, সুদদাতা, সুদের সাক্ষী ও লেখক—সকলের ওপর আল্লাহর অভিশাপ নেমে এসেছে। ইসলামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সুদহীন লেনদেন কেবল নৈতিকতার ভিত্তিতে নয়, বরং সামাজিক সাম্য ও আর্থিক ভারসাম্যের রক্ষার্থেও অপরিহার্য।
আল্লাহ তাআলা বলেন—
“হে মুমিনগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খেও না। আল্লাহকে ভয় করো, তাহলে তোমরা সফল হবে।”
(সুরা আল-ইমরান, আয়াত ১৩০)
আরেক আয়াতে তিনি বলেন—
“মানুষের সম্পদ বাড়ানোর উদ্দেশ্যে তোমরা যে সুদ দিয়ে থাকো, তা আল্লাহর দৃষ্টিতে বৃদ্ধি পায় না। কিন্তু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে যে জাকাত দেওয়া হয়, সেটাই প্রকৃত সম্পদ।”
(সুরা রূম, আয়াত ৩৯)
হাদিসে এসেছে—
“মেরাজে আমি এমন এক দল দেখেছি যাদের পেট ঘরের মতো বড়, যার মধ্যে সাপ রয়েছে। তারা ছিল তোমার উম্মতের সুদখোররা।”
(ইবনে মাজাহ ২২৭৩)
“রক্তের নদীতে এক লোককে বারবার পাথর ছুড়ে নিচে ফেলে দেওয়া হচ্ছিল। তিনি ছিলেন একজন সুদখোর।”
(বুখারি ২০৮৫)
রাসুল (সা.) বলেছেন—
“সুদখোর, সুদদাতা, সাক্ষী ও লেখক—সকলেই অভিশপ্ত এবং সমান অপরাধী।”
(মুসলিম ৪১৭৭)সুদ ও ব্যবসার মৌলিক পার্থক্য
বিষয় | সুদ | ব্যবসা |
---|---|---|
বিনিময়ের ধরন | মুদ্রার বিপরীতে মুদ্রা বা একই পণ্যের আদান-প্রদান | পণ্যের বিপরীতে মুদ্রা বা ভিন্ন পণ্যের আদান-প্রদান |
লাভের ধরন | পূর্বনির্ধারিত হার, সময় অনুযায়ী বৃদ্ধি | লাভ নির্ভর করে চাহিদা, বাজারদর ও ঝুঁকির ওপর |
নৈতিক ভিত্তি | একপক্ষের নিঃস্ব করার আশঙ্কা | উভয়পক্ষের অংশীদারিত্ব |
শরিয়তের দৃষ্টিতে সুদের সংজ্ঞা
ফতোয়া আলামগিরি: কোনো অতিরিক্ত মাল, যার বিনিময়ে কিছু নেই, সেটিই সুদ।
হেদায়া: শর্তসাপেক্ষে বিনিময়হীন অতিরিক্ত অংশই সুদ।
সারাংশ: মূল অর্থ থেকে সময়ের বিনিময়ে বাড়তি অর্থ নেয়া বা দেয়া— এটাই সুদ।
ইসলাম অনুমোদিত বিকল্প পদ্ধতি
ইসলামে সুদ পরিহার করে নিচের আর্থিক ব্যবস্থাগুলো অনুমোদিত:
মুজারাবা (Mudarabah): মুনাফাভিত্তিক বিনিয়োগ
মুশারাকা (Musharakah): অংশীদারিত্বে ব্যবসা
ইজারা (Ijarah): ভাড়া চুক্তিভিত্তিক ব্যবসা
ইসতিসনা (Istisna): অগ্রিম নির্মাণ-ভিত্তিক বাণিজ্য
বাই’ সালাম (Bay’ al-Salam): অগ্রিম মূল্য পরিশোধের চুক্তি
মুরাবাহা ও মুআজ্জাল: পণ্য বিক্রয়ের সময় ভিত্তিক মূল্য নির্ধারণ
সুদের ভয়াবহতা কেন এত বেশি?
এটি দারিদ্র্য, শোষণ ও বৈষম্য বাড়ায়
সুদভিত্তিক ব্যবস্থা অসাম্য ও শোষণের ঝুঁকি তৈরি করে
এটি মানবিক মূল্যবোধ, পারস্পরিক সহানুভূতি ও সহযোগিতা নষ্ট করে
সুদ নির্বিচারে সম্পদ একত্রিত করে কিছু মানুষের হাতে
সুদ কেবল একটি আর্থিক গুনাহ নয়, বরং তা সমাজের অর্থনৈতিক ভিত্তিকে ধ্বংস করে দেয়। কোরআন ও হাদিসে সুদকে এত কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে যে, এর চেয়ে বড় শাস্তির কথা অন্য কোনো গুনাহের ক্ষেত্রে উল্লেখ পাওয়া যায় না।
সুতরাং একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হলো সুদমুক্ত অর্থনৈতিক পদ্ধতি অনুসরণ করা, সমাজে ন্যায্যতা ও নৈতিকতা প্রতিষ্ঠা করা।
Leave a Reply