গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতি শুরুর পর থেকেও ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৩৭৭ জন নিহত হয়েছে। হামাস জানিয়েছে, ইসরায়েল তাদের চুক্তিভঙ্গ অব্যাহত রাখায় যুদ্ধবিরতির পরবর্তী ধাপ এগোনো সম্ভব হচ্ছে না। গাজা কর্তৃপক্ষের দাবি, অক্টোবর থেকে কার্যকর হওয়া এই যুদ্ধবিরতি কমপক্ষে ৭৩৮ বার লঙ্ঘন করেছে ইসরায়েল।
হামাসের কর্মকর্তা হাসাম বদরান মধ্যস্থতাকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ইসরায়েলকে বিদ্যমান চুক্তির পুরোপুরি বাস্তবায়নে বাধ্য করতে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়াতে হবে। তিনি বলেন,
“অধিকৃত শক্তি (ইসরায়েল) তাদের লঙ্ঘন বন্ধ না করা এবং প্রতিশ্রুতিগুলো এড়িয়ে না গেলে যুদ্ধবিরতির পরবর্তী ধাপ শুরু সম্ভব নয়।”
তিনি আরও জানান, যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ সম্পূর্ণ বাস্তবায়নে চাপ বাড়াতে হামাস মধ্যস্থতাকারীদের অনুরোধ করেছে।
অক্টোবর ১০ থেকে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি মূলত দুই বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে ছিল—
গাজায় আটক বন্দিদের বিনিময়ে ইসরায়েলে আটক ফিলিস্তিনিদের মুক্তি
ইসরায়েলি বাহিনীর আংশিকভাবে গাজা থেকে সরে যাওয়া
তবে যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ, অর্থাৎ—
গাজা শাসনব্যবস্থার ভবিষ্যৎ, সম্ভাব্য আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন, এবং প্রস্তাবিত “বোর্ড অব পিস” গঠন—এগুলোর কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি।
এদিকে, আন্তর্জাতিক মহল এবং ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে, কারণ যুদ্ধবিরতি চলাকালেও ইসরায়েলি হামলা থামছে না। গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য, যুদ্ধবিরতি শুরুর পর ইসরায়েলি আক্রমণে এখন পর্যন্ত ৩৭৭ জন নিহত এবং ৯৮৭ জন আহত হয়েছে।
একজন মার্কিন কর্মকর্তা আল জাজিরাকে জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতির পরবর্তী ধাপ নিয়ে আলোচনা এগোলেও এখনো বেশ কিছু বড় চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।
মার্কিন পক্ষের মতে, ২০২৬ সালের শুরুর দিকে গাজায় আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনীর প্রথম পর্যায়ের মোতায়েন শুরু হতে পারে। কোন কোন দেশ এই বাহিনীতে অংশ নেবে, কীভাবে পরিচালিত হবে, তাদের নিয়মনীতি কী হবে—এসব নিয়ে আলোচনা চলছে। খবর পাওয়া গেছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত “বোর্ড অব পিস” থেকে যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
মার্কিন কর্মকর্তা জানান, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সমর্থিত যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা স্পষ্টভাবে দুইটি বিষয় উল্লেখ করেছে—
ইসরায়েলকে সম্পূর্ণভাবে গাজা থেকে সরে যেতে হবে
হামাসকে নিরস্ত্র হতে হবে
এছাড়া স্থানীয় ফিলিস্তিনিদের দিয়ে গঠিত একটি পুলিশ বাহিনী তৈরির কথাও আলোচনায় রয়েছে।
মার্কিন পক্ষ আরও জানায়, গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশ বাড়ানোর আন্তর্জাতিক দাবি তারা বুঝতে পারছে এবং এ বিষয়ে বাধা দূর করতে কাজ চলছে
ইসরায়েলি লেফটেন্যান্ট জেনারেল আইয়াল জামির দাবি করেন, গাজায় ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকা নির্দেশকারী “ইয়েলো লাইন”ই এখন “নতুন সীমান্ত”—এমন বক্তব্যের জবাবে জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টেফান দুযারিক জানান, এ ধরনের দাবি গৃহীত নয়।
ইসরায়েল আংশিকভাবে সরে যাওয়ার পরও এখন পর্যন্ত গাজার ৫৮ শতাংশ এলাকায় অবস্থান করছে। যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী ইসরায়েলকে পুরোপুরি সরে যেতে হবে, তবে এ জন্য কোনো সময়সীমা নির্ধারিত নেই।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, তাদের বাহিনী খানইউনিসের কিছু এলাকায় নতুন এয়ারস্ট্রাইক ও গোলাবর্ষণ করেছে। হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
উত্তর গাজার বেইত লাহিয়ায়ও ঘরবাড়ি ধ্বংসের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজা প্রশাসন এক বিবৃতিতে বলেছে—
“এই পদক্ষেপগুলো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন এবং যুদ্ধবিরতি চুক্তির মূল কাঠামোকে বিপর্যস্ত করার উদ্দেশ্যমূলক চেষ্টা।”
গাজা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের তথ্য:৭ অক্টোবর ২০২৩ থেকে ইসরায়েলের সামগ্রিক হামলায় এখন পর্যন্ত ৭০,৩৬৬ জন নিহত। ১,৭১,০৬৪ জন আহত
ইসরায়েলি তথ্য অনুযায়ী ১,১৩৯ জন ইসরায়েলি নাগরিক ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় নিহত। ২০০ জনের বেশি মানুষকে আটক করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.