মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা ফের চরমে। হুথি নিয়ন্ত্রিত ইয়েমেনের হুদাইদা, রাস-ইসা ও আস-সালিফ বন্দর এবং রাস কাথিব বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এর জবাবে, হুথি বিদ্রোহীরা ইসরায়েলের অভ্যন্তরে একাধিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। এই পাল্টাপাল্টি হামলায় নতুন করে সংঘাতের আশঙ্কা বাড়ছে।
রবিবার গভীর রাতে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী দাবি করে, তারা হুথি নিয়ন্ত্রিত বন্দর হুদাইদা, রাস-ইসা ও আস-সালিফে হামলা চালিয়েছে, পাশাপাশি হুদাইদা বন্দরে নোঙর করা Galaxy Leader নামক জাহাজের রাডার সিস্টেমেও আঘাত হানে। এই জাহাজটি হুথিরা আগে থেকেই দখল করে রেখেছিল।
আক্রমণ চালানো হয়েছে রাস কাথিব বিদ্যুৎ কেন্দ্রেও। যদিও এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
হামলার পরপরই সোমবার ভোরে হুথিরা পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। ইসরায়েলি বাহিনীর দাবি, তারা দুটি ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত ও প্রতিহত করেছে। এর জেরে জেরুজালেম, হেবরন ও ডেড সি অঞ্চলজুড়ে সাইরেন বেজে ওঠে। এখন পর্যন্ত কোনো ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
হুথি মুখপাত্র আমিন হায়ান ইয়েমেনি এক বিবৃতিতে জানান, স্থানীয়ভাবে তৈরি সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল দিয়ে তারা ইসরায়েলের যুদ্ধবিমানকে পিছু হটাতে বাধ্য করেছে। তিনি বলেন, “আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শত্রুপক্ষের মধ্যে চরম বিভ্রান্তি তৈরি করেছে।”
হুথি ঘনিষ্ঠ সংবাদমাধ্যম আল মাসিরাহ এবং সাবা নিউজ এজেন্সি জানায়, হুদাইদা ও বন্দর শহরগুলিতে একাধিক হামলার ঘটনা ঘটেছে, তবে হুথিরা এখনও পর্যন্ত কোনো প্রাণহানি বা বড় ধ্বংসের কথা স্বীকার করেনি।
সাম্প্রতিক এই উত্তেজনার মধ্যেই লোহিত সাগরে একটি পণ্যবাহী জাহাজে গ্রেনেড ও ড্রোন হামলা চালানো হয়। এতে জাহাজে আগুন ধরে যায় এবং নাবিকদের তা ছেড়ে পালাতে হয়। যদিও কেউ এখনো এ হামলার দায় স্বীকার করেনি, তবে ব্রিটিশ মেরিটাইম এজেন্সি জানিয়েছে, হামলার ধরন হুথিদের সাধারণ কৌশলের সঙ্গে মিল রয়েছে।
এছাড়া রবিবার ইসরায়েলি বাহিনী দক্ষিণ লেবানন এবং বেকা উপত্যকায় হিজবুল্লাহর অবস্থানে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে। তারা দাবি করেছে, রকেট লঞ্চিং প্যাড এবং অস্ত্র মজুদের কেন্দ্রবিন্দুতে আঘাত হানা হয়েছে। যদিও এই অভিযোগের পক্ষে ইসরায়েল কোনো নির্দিষ্ট প্রমাণ হাজির করেনি।
এই সাম্প্রতিক হামলা ও প্রতিক্রিয়া এমন এক সময়ে এসেছে, যখন গাজা যুদ্ধের সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা চলছে এবং একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান পরমাণু আলোচনা পুনরায় শুরু করার প্রশ্নে টানাপোড়েন চলছে। মার্কিন হামলায় ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু স্থাপনায় ক্ষতি হওয়ার পর এই অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
Leave a Reply